গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক প্রকল্পে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের রুল

রাজধানীর গুলশান,বনানী ও বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের বিদ্যমান আইন  (২০১৭ সালে প্রণীত আইন) অনুযায়ী, ক্ষতিপূরণ প্রদানের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকা জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ. শাখা), ঢাকা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানকে আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

ভুক্তভোগী মো. লেহাজউদ্দিনসহ ৮৩ জনের পক্ষে করা রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার (২৫ এপ্রলি) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান এবং বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

আদালতে রিটকারীদের পক্ষে ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম শুনানি করেন।

পরে ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১৫ সালে রাজধানীর গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করে রাজউক। অধিগ্রহণের আওতায় যাদের জমি পড়েছে, তাদেরকে এলএ কেসের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ ধারা এবং ৬ ধারায় নোটিশ করা হয়েছে। অথচ তাদেরকে এখনও পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। ক্ষতিপূরণের কোনও টাকা জেলা প্রশাসনে জমা দেয়নি রাজউক। অপরদিকে জমির মালিকরা দু’টি নোটিশপ্রাপ্ত হওয়ায় জমির খাজনা পরিশোধ করতে পারছেন না। এ কারণে  জেলা প্রশাসনের দেওয়া ৩ ধারা এবং ৬ ধারার নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করেছি। শুনানি নিয়ে আদালত বিবাদীদের প্রতি রুল জারি করেছেন।’

রিটে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথম খরচ ধার্য করা ছিল ৪১০ কোটি ২৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা। পরে প্রকল্পটিতে সংশোধন আনা হয়। সংশোধিত প্রকল্পে ৮২ দশমিক ৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ, ২০ হাজার ৫৫২ দশমিক ১৭ রানিং মিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫৩১ দশমিক ১৩ ঘন মিটার মাটি ভরাট, ৩৭৩ দশমিক ৪৮ রানিং মিটার কজওয়ে নির্মাণ, ৫ হাজার ২১৮ দশমিক ৩২ রানিং মিটার ড্রাইভওয়ে নির্মাণ, ২ হাজার ৫০০ রানিং মিটার তীর সংরক্ষণ কাজ, ৬৯ হাজার ৬১ বর্গমিটার গ্রাস টার্ফিং, ৮ লাখ ৯২ হাজার ৭২৭ দশমিক ৪৪ ঘনমিটার লেক খনন, একশটি সীমানা পিলার নির্মাণ, ৪ হাজার গাছ রোপণ ও পরামর্শক সেবা গ্রহণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ এ জন্য বাড়ানো হয়নি বরাদ্দ।

২০১৭ সালে প্রণীত ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন’র উদ্ধৃতি দিয়ে রিটে উল্লেখ করা হয়, আইনটির ৮ ধারার (৪) উপধারার (৩) এ বলা হয়েছে— প্রাক্কলন প্রাপ্তির ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রত্যাশী ব্যক্তি বা সংস্থার ক্ষতিপূরণের মঞ্জুরির অর্থ নির্ধারিত পদ্ধতিতে জেলা প্রশাসকের নিকট জমা প্রদান করতে হবে।’ আইনের ১১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘ধারা ৮ এর অধীন রোয়েদাদ প্রস্তুতের পর দখল গ্রহণের পূর্বে প্রত্যাশী ব্যক্তি বা সংস্থা কর্তৃক ধারা ৮ এর উপধারা (৩) অনুসারে প্রস্তুতকৃত ক্ষতিপূরণ মঞ্জুরির প্রাক্কলিত অর্থ জমা প্রদানের অনধিক ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসক উক্ত ক্ষতিপূরণের অর্থ উপধারা (২) এর বিধান সাপেক্ষে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রদান করবেন।’

রিটে উন্নয়ন প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবেতর জীবন যাপনের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। ভুক্তোভোগীরা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য অনেকেই স্মৃতিবিজড়িত ভিটে মাটি, আবেগজড়িত জমি সরকারকে দিতে বাধ্য হয়েছেন। গুলশান-বনানী-বারিধারা লেকে অনেকে শেষ সম্বলও হারিয়েছেন। ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন— এই আশায় অনেকে ধার-কর্জ করে বাসা ভাড়া দিচ্ছেন। সংসার চালাচ্ছেন। অর্থাভাবে চিকিৎসা খরচও চালাতে পারছেন না অনেকে। অধিগ্রহণের নোটিশপ্রাপ্ত হওয়ায় ভুক্তভোগীরা অন্যত্র জমি বিক্রি করতে পারছেন না। ভাড়া প্রদান কিংবা ব্যবহারও করতে পারছেন না।

প্রসঙ্গত, ঢাকা মহানগরীর শোভা বর্ধন, অবৈধ দখলদার থেকে লেক উদ্ধারসহ বেশ কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০১০ সালে রাজউক গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সেটি সম্ভব হয়নি। ২০১৫ সালে প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি)। ক্ষতিগ্রস্তদেরকে ৩ এবং ৬ ধারায় নোটিশও করে। অথচ ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের কোনও অর্থ এখনও পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি। এদিকে খরচ বৃদ্ধি ছাড়াই উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ৪ বার। এতেও প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি। ২০১৯ সালে পঞ্চমবার প্রকল্পের মেয়াদ ৪ বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সাল করার প্রস্তাব করা হয়।