আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের সুপারিশ

যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে দুর্ঘটনাজনিত আহত ও নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্ধারণের সুপারিশ জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।

সরকারের প্রতি সুপারিশে তারা বলেছে, আইএলও কনভেনশন ১০২ ও ১২১ অনুসমর্থন করা এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন পঞ্চম তফসিল ও দ্বাদশ অধ্যায় সংশোধন করতে হবে এবং মামলার দীর্ঘসূত্রতা দূরীকরণে ও দ্রুত নিষ্পত্তিতে বিচার প্রক্রিয়ার বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা আইনে সংযোজন করতে হবে।

এছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শ্রম আদালতের সংখ্যা বাড়াতে পদক্ষেপ গ্রহণসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে শ্রম আদালতের কার্যক্রম নিয়মিত পূর্ণসময় পরিচালিত করারও সুপারিশ করা হয়।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম আয়োজিত ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৯ বছর-শ্রমিকের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিশ্চিতে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব সুপারিশ করা হয়।

আলোচনাসভায় আইনজীবী, ট্রেড ইউনিয়ন, মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিও বেশকিছু সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হলো–

ক. শ্রমিকদের আইনগত সহায়তা দিতে আইনজীবীদের আরও কার্যকারী ভূমিকাসহ শ্রমিকদের মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে সংবেদনশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

খ. ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করা, শ্রমিকদের আইনগত সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তাসহ শ্রম আইন সংশোধনীতে জোড়ালো ভূমিকা রাখতে হবে।

গ. মালিকদের আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের অধিকার, নিরাপদ কর্মস্থল ও জীবনযাত্রার মানন্নোয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে।

ঘ. শ্রমিকদের নিজ অধিকার রক্ষায় আরও সচেষ্ট হতে হবে। আইন অনুযায়ী অধিকার বাস্তবায়নে শান্তিপূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

আলোচনা সভায় শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতা কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের দেশের কারখানা মালিকরা শ্রমিকের নিরাপত্তার ব্যাপারে খুবই উদাসীন। এদের মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে মুনাফা অর্জন।’

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিকফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘শ্রম আইন পুনঃপরীক্ষা করতে হবে। বিদ্যমান আইনে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিধিবিধান যথাযথ নয়। আমাদের শ্রম আইন এতোটাই জটিল, এর সরল কোনও ব্যাখ্যা দেওয়াই সম্ভব নয়। ২৩, ২৬, ২৭ ধারার মতো যে আইনে শ্রমিকদের শাস্তির বিধান আছে সেগুলো যথাযথ মানা হয়। কিন্তু ওভারটাইমসহ শ্রমিক স্বার্থের পক্ষের আইনগুলো মালিকেরা মানেন না।’

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বলেন, ‘২০১৩ সালে বিভিন্ন কল-কারখানায় যে অবস্থা ছিল তা কিছুটা বদলেছে। আমরা শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল চাই। ১৯৮৪ সালে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ যেভাবে দাবি তুলেছিল সেই আন্দোলন কোথায়? শ্রমিক ইউনিয়নগুলো কোথায়? ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন ছাড়া শ্রমিকের মুক্তি সম্ভব নয়।’

শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহ্বায়ক ড. হামিদা হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় আলোচনা করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের যুগ্ম মহাসচিব ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, কর্মজীবী নারী নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া রফিক বেবী, বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিন প্রমুখ।