পথে পথে ‘জাকাত প্রত্যাশীরা’

‘এইবার আমার কপালে কোনও জাকাত জুটে নাই। গতবার কমবেশি পাইছিলাম, এইবার একটা লুঙ্গিও পাই নাই। পরে হাউস কইরা ২৩০ টাকা দিয়া নিজেই একটি লুঙ্গি কিনছি।' — বলছিলেন মিরপুরের শাহ আলী মাজারের সামনে অপেক্ষারত ভিক্ষুক আব্দুর রহমান। একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তার পাশে বসে থাকা আরেক ভিখারি কাঞ্চনা। তার ভাষ্য, ‘এবছর মানুষজন আগের মতো দান করছে না’।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মসজিদের সামনে অপেক্ষমাণ ভিক্ষুক, ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা অন্যান্য বছরের ঈদের তুলনায় জাকাত, ফিতরা কিংবা দান অনেক কম পাচ্ছেন।

মিরপুর ২ নম্বরের বড়বাগ মসজিদের সামনে অপেক্ষমাণ রাশেদা খাতুন নামে একজন বলেন, ‘মসজিদে যারা নামাজ পড়তে আসেন তারা হয়তো ১০-২০ টাকা দেয়। যাকাতের টাকা পায় এলাকার নিয়মিত ভিখারিরা, যারা বাসায় গিয়ে গিয়ে ভিক্ষা সংগ্রহ করে। তারা গিয়ে জাকাতের টাকা চাইলে হয়তো ১০০-২০০ করে দেয়।’ তবে তিনি নিজে এখন পর্যন্ত জাকাতের কোনও টাকা কিংবা শাড়ি পাননি বলে দাবি করেন।

আবার অনেকে মসজিদের সামনে দাঁড়ানোর চাইতে স্থানীয় গলি বা বাজারগুলোতে ঘোরাঘুরিতেই বেশি লাভ খুঁজে পান। সেখানে তারা ভিক্ষা চাওয়ার পাশাপাশি সুরে সুরে জাকাত-ফিতরার কথাও মনে করিয়ে দেন দানকারীদের।

ভিক্ষুক-2

গতবারের মতো জাকাতের অর্থ না পেলেও কিছুটা পেয়েছেন বলে জানালেন শুক্রাবাদ এলাকার প্রায় ৬০ বয়সী মাজেদা বেগম। তিনি বলেন, 'জানা-শোনা লোকেরা জাকাত হিসেবে ৫০০ টাকা করে দেয়। আর রাস্তায় অচেনারাও জাকাতের টাকা বইলা দেয়। তবে এইবার কম লোকে জাকাত দিতাছে।'

এই জাকাত না পাওয়া নিয়ে অনেক ভিখারি আবার ঠাট্টা করে বলছেন, ‘গতবার করোনার ভয় ছিলো তাই দিছে। এইবার ভয় কেটে গেছে তাই আর দিচ্ছে না।’

তবে ভাসমান এই ভিক্ষুকদের এমন দাবি ঢালাওভাবে সত্য নয় বলেও মনে করেন অনেকেই। গণমাধ্যমকর্মী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর ঘটা করে জাকাত দেওয়া নিয়ে নানান দুর্ঘটনা এবং জাকাতের উদ্দেশ্যে দেওয়া নিম্নমানের কাপড় নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এসব বিষয় ধর্মীয় নেতারাও নিষেধ করেন। তাই এভাবে জাকাত দেওয়া কিছুটা কমছে। তবে অনেকেই গ্রামে ও নিজ এলাকায় নগদ অর্থ দিয়ে জাকাত আদায় করছেন।’

জাকাত ও ফিতরার পরিমাণ

ইসলামী নিয়মানুযায়ী সম্পদের বা অর্থের জাকাত ওই অর্থের শতকরা আইড়াই টাকা করে প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ এক লক্ষ টাকার জাকাত আসবে আড়াই শতাংশ হিসেবে ২৫০০ টাকা।

এছাড়া স্বর্ণের উপর জাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে ২০ দিনারের উপরে স্বর্ণ থাকে তাহলে তাকে জাকাত দিতে হবে। এখানে ১ দিনারে স্বর্ণ থাকে ৪ দশমিক ২৫ গ্রাম। অতএব ২০ দিনারে স্বর্ণ হবে ৮৫ গ্রাম। আর এক ভরি সমান হচ্ছে ১১ দশমিক ৬৬ গ্রাম স্বর্ণ।

এছাড়াও নগদ গচ্ছিত অর্থ, মূল্যবান ধাতু, ব্যবসায়ী লভ্যাংশ, প্রাইজবন্ড, শেয়ার মার্কেটের হিসেবাও জাকাত দেয়া হয়।

এ বছর জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটি জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩১০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।