‘সেমাই ছাড়া ঈদ হয় না’

সেমাই ঈদুল ফিতরের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। ঈদের  নামাজের আগে মিষ্টিমুখ করে যাওয়ার রীতিতে অন্যসব মিষ্টি খাবার থেকে এগিয়ে রয়েছে সেমাই।  রাজধানীর মিরপুরের মোহাম্মদিয়া মার্কেটে সেমাই কিনতে এসেছেন গৃহবধূ পারভীন। তিনি বলেন, ‘সেমাই ছাড়া তো ঈদই হয় না। মেহমান আসলে প্রথমেই সেমাই দিতে হয়। তারপর অন্যান্য খাবার।’

সোমবার (২ মে) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের চাপে সেমাই বিক্রেতাদের স্থির থাকার সুযোগ নেই। একজন ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে দিতে আরও কয়েকজন সেমাইয়ের জন্য অপেক্ষায় আছেন। সেমাইয়ের সঙ্গে বিক্রি বেড়েছে চিনি আর দুধেরও।

বাজারে বিভিন্ন ধরনের বিভিন্নমানের সেমাই পাওয়া যায়। লাচ্ছি সেমাই, ঝিলমিল সেমাই, লম্বা সেমাই। প্যাকেটজাত সেমাইয়ের মধ্যে রয়েছে কিষোয়ান, কুলসান, বনফুল, প্রিন্সের লাচ্ছি সেমাই। তবে খোলা সেমাইয়ের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। ডালডায় ভাজা প্রতি কেজি লাচ্ছি সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৯০ টাকার মধ্যে। রঙিন সেমাই বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা করে। সাধারণ লম্বা সেমাই প্রতি কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৮০ টাকার মধ্যে। বাজারে ঘিয়ে ভাজা সেমাইয়ের উপস্থিতি ছিল না বলেই চলে। এছাড়া গতবারের তুলনায় এবার সেমাইয়ের দামও বেড়েছে অনেক। মোহাম্মদীয় মার্কেটের সেমাই বিক্রেতা মাসুম বলেন, ‘গতবারের  ১২০ টাকার লাচ্ছা সেমাই এবার ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলের ও ময়দার দাম বাড়ায় সেমাইয়েরও দাম বেড়েছে।’

ঘিয়ে ভাজা সেমাই নেই কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ কাস্টমার শুধু ঈদ উপলক্ষে সেমাই কেনেন। তারা সেমাইয়ের মানের চেয়ে দামটাকে গুরুত্ব দেন। এছাড়া ঘিয়ের দাম যেভাবে বাড়ছে, ঘিয়ে ভাজা সেমাই কোথায় পাবেন। ঘিয়ে ভাজা সেমাইয়ের কথা যেসব বিক্রেতা দাবি করে, তারা আসলে অরিজিনাল ঘি-ভাজা সেমাই দিতে পারে না।’

সেমাইয়ের ক্রেতা কেমন, এমন প্রশ্নে আরেক দোকানের বিক্রেতা সোহেল বলেন, ‘কাস্টমার আনলিমিটেড। সকাল থেকে কতজন আসছে, হিসাব নেই। রাত পর্যন্ত চলবো।’

পাইকারি ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। খুচরা বিক্রি ঈদের সপ্তাহখানেক আগে থেকে শুরু হলেও পাইকারি বিক্রেতারা ১৫ রোজা থেকেই বিক্রি শুরু করেন। শুরু থেকে একটু কম হলেও পরে বিক্রির চাপ বেড়েছে। পাইকারি দোকানের কর্মচারী রিয়াদ হাসান বলেন, ‘শুরু থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাজার দেখছিল, পরে যখন বুঝতে পারলো, মানুষের কেনাকাটায় আগ্রহ আছে, তখনই তারা সেমাই জমা করতে থাকে।’

খোলা সেমাইয়ের মতো না হলেও বিক্রি বেড়েছে বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট সেমাইয়ের। মূলত স্বাস্থ্য সচেতন লোকেরা প্যাকেটজাত সেমাই বেশি কিনছেন। আনোয়ার নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘ কেবল ঈদেই সেমাই খাওয়া হয়। তাই একটু বেশি দাম হলেও প্যাকেটের সেমাই খাওয়া ভালো। কোনও ভেজাল থাকে না।’

খোলা বাজার ছাড়াও বিক্রি বেড়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের মিষ্টির দোকান এবং বেকারিতে। পান্থপথের মীনা সুইটসের আউটলেটে দ্বায়িত্বরত কর্মী উত্তম কুমার বেপারী বলেন, ‘আমাদের সেমাইয়ের নিজস্ব ক্রেতা রয়েছেন। এবারের ঈদেও তারাই বেশি সেমাই কিনছেন। আমাদের সব আউটলেটেই ক্রেতাদের চাহিদা রয়েছে।’ মীনা সুইটসের প্রতি ৪০০ গ্রাম প্যাকেটের লাচ্ছা সেমাইয়ের দাম ১৯৮ টাকা। এছাড়া প্রিন্স ও বনফুলের সেমাই তাদের নিজস্ব আউটলেটসহ খোলা বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে।