ঈদে সবাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মজাদার সব খাবার খেয়ে, আনন্দ ও হই-হুল্লোড়ে দিন পার করছেন। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও আছে, বেশ কয়েকটি পেশার মানুষের ক্ষেত্রে। ঈদের দিনেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ মেলে না তাদের। বিশেষ দিনগুলোতেও অফিস কিংবা অফিসের বাইরে ডিউটি করতে হয় তাদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতরা, গণমাধ্যমকর্মী, সিকিউরিটি গার্ড, শ্রমজীবী মানুষ, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের ঈদের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর তেমন সৌভাগ্য হয়ে ওঠে না। ঈদের দিন অফিস শেষে যে সময়টুকু পাওয়া যায়, স্বজনদের নিয়ে সেটাই উপভোগ করেন তারা। তবে এ নিয়ে কারও মনে ক্ষোভ নেই। জনসাধারণের সেবায় কাজ করতে পারছেন, সেটাই তাদের সবচেয়ে সন্তুষ্টির বিষয়।
এমন কয়েকটি পেশা রয়েছে, যাদের অফিস কিংবা ডিউটি করতে হয় বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে। নিজেদের কাজের তাগিদেই আনন্দ-উৎসবকে আড়াল করে ঈদের সকালে ডিউটিতে যান তারা। এভাবেই কেটে যাচ্ছে তাদের চাকরি জীবন।
বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, সিকিউরিটি গার্ড এবং গণপরিবহন সংশ্লিষ্টদের ঈদের দিনেও নিজ নিজ কর্মস্থলে কাজ করছেন।
মঙ্গলবার (৩ মে) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, যারা ঈদেও অফিস করেছেন, তারা সকালে নিজ নিজ এলাকায় ঈদের জামাতে নামাজ পড়েছেন। এরপর কর্মস্থলে ডিউটি শুরু করেন।
হাসপাতালগুলো ঘুরে দেখা গেছে, রোগীর তেমন চাপ না থাকলেও ইমার্জেন্সি বিভাগ খোলা রয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রোগী এলেই চিকিৎসা দিচ্ছেন।
রাজধানী ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে ঈদের মাঝেও বিভিন্ন জায়গায় কর্মব্যস্ত দেখা গেছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের।
পত্রিকা, অনলাইন কিংবা টেলিভিশনে কর্মরত সাংবাদিকরা জনগণের কাছে খবর পৌঁছে দিতে ঈদের দিনেও ব্যস্ত রয়েছেন খবর সংগ্রহে। সকাল থেকে গণমাধ্যম অফিসগুলোতে তৎপর রয়েছেন সংবাদকর্মীরা।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী রিফাত বলেন, ‘ঈদের মাঝেও কাজ করছি। ছুটি নেই। আমরা যদি একদিন ময়লা না নিই, তাহলে এলাকা দুর্গন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের এই বিষয়গুলো কেউ সেভাবে গুরুত্ব দেয় না, অনেকেই আমাদের পেশাকে ছোট করে দেখে। কিন্তু আমি প্রায় আট বছর ধরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করছি।’ তিনি বলেন, ‘ঈদের মাঝে কাজ করতে ভালোই লাগে। খারাপও কিছুটা লাগে। কারণ, সবাই যখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হয়, আমরা তখনও কাজ করি।’
বেসরকারি টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি তাইমুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জনগণের কাছে প্রতি মুহূর্তের খবর পৌঁছে দেওয়াই সাংবাদিকদের কাজ। ঈদ কিংবা বিশেষ দিন এলেই আমাদের কাজের চাপ কিছুটা বেড়ে যায়। অনেক জায়গায় অনেক ধরনের অনুষ্ঠান থাকে। সেগুলো কাভার করতে হয়। ঈদ উপলক্ষে অফিস করছি। অফিস শেষে যতটুকু সময় পাবো, পরিবারের সঙ্গে কাটাবো।’
রবরব পরিবহনের হেল্পার কামরান বলেন, ‘আমাদের ইনকাম গাড়ির চাকা চললে। এক কথায় আমরা দিন আনি দিন খাই। নিজেদের পেটের তাগিদে ঈদের দিনেও গাড়ি নিয়ে বের হতে হয়েছে। যদিও যাত্রী কম। কিছু ইনকাম হলে পরিবার নিয়ে ঈদটা আরেকটু ভালোভাবে করতে পারবো। বিকালের দিকে গাড়ি বন্ধ করে বাসায় চলে যাবো।’