মেট্রোরেলকে চেনাবে যার লোগো

একটা নতুন সূর্য উঠছে লাল। নিচে বাংলার সবুজ আভা। দুয়ে মিলে বাংলাদেশ। মেট্রোর ‘এম’ অক্ষরটাও এমনভাবে বসানো, মনে হয় যেন প্ল্যাটফর্ম। রেলটির দিকে কিছুক্ষণ তাকালেই মনে হবে, ওটা স্থির নয়, ছুটে চলেছে। উন্নয়ন-অগ্রগতিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াই যেন ইঙ্গিত করছে ওটা।

এসব মিলেই মেট্রোরেলের লোগো। প্রতিযোগিতায় লোগোটি চূড়ান্ত বিবেচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং। যিনি লোগোটি বানিয়েছেন তিনি সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া চারুকলার উজ্জ্বল শিক্ষার্থী আলী আহসান নিশান। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় নিশান জানালেন লোগো তৈরির গল্প।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার শুরুটা কীভাবে জানতে চাইলে নিশান বলেন, ‘তখন মাত্র পাস করে বেরিয়েছি। ভালো রেজাল্টের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে স্বর্ণপদকও নিয়েছি। তেমন উল্লেখযোগ্য কাজ করে উঠতে পারিনি।’

‘একদিন বিভাগে শিক্ষকের কাছে যাওয়ার পর তিনি আমাকে বললেন, এই লোগো প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। ওটা ছিল স্বপ্ন পূরণের আহ্বানের মতো। আমি কাজটি করে জমা দিই। অনেকেই জমা দিয়েছিল। অবশেষে আমাদের চারুকলা থেকে তিনটি লোগো পাঠানো হয়। আমার দুটো, আরেকজনের একটা।’

নিশান বললেন, ‘এরপর জাতীয়ভাবে জমা হওয়া লোগোগুলো থেকেও শর্টলিস্ট করা হয়। সেখান থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার লোগোটি চূড়ান্ত করেন।’

মেট্রোরেল

লোগো চূড়ান্ত হওয়ার খবর শুনে কেমন লেগেছে? অনুভূতি প্রকাশে আলী আহসান নিশানের ঝটপট জবাব, ‘এটা কিছুতেই বলে বোঝানো সম্ভব নয়! আনন্দ, উৎসাহ সব মিলিয়ে অন্যরকম!’

‘মেট্রোরেলের স্টেশনে যে সাইনগুলো থাকবে, সেগুলোও আমার করা। দেশের মানুষ যে জিনিসগুলো ব্যবহার করবেন সেখানে আপনার সম্পৃক্ততা আছে যখনই জানবেন, সেটার অন্যরকম একটা অনুভূতি হবেই।’

সাইনের কাজ করতে গিয়ে কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়েছিল প্রশ্নে জানালেন, ‘দেশের সব স্তরের মানুষ যেন চিহ্নগুলো দেখেই বুঝতে পারেন কোনদিকে যেতে হবে, টয়লেট কোনদিকে, টিকিট কোথায় পাবেন— এসব ভাবতে হয়েছে।’

‘আমি রাস্তায় রাস্তায় গিয়ে নানা জনকে জিজ্ঞেস করেছি। চিহ্নগুলো দেখিয়ে জানতে চেয়েছি, এইটা কী? যখন দেখেছি চিহ্ন দেখেই বলে দিতে পেরেছে এখানে টিকিট দেবে, তখন সেটাই চূড়ান্ত করেছি।’

আলী-আহসান-নিশান

লোগোর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নিশান বললেন, ‘বাংলাদেশের যে উন্নয়নের গতি, সেটা লোগোর দিকে তাকালে লক্ষ্য করা যাবে। সাধারণত লোগো স্থির প্রকৃতির হয়। এর রঙের ব্যবহারেও এক ধরনের ভারসাম্য থাকে। যেন চোখটা আটকে থাকে। কিন্তু এই লোগোতে সেটা ইচ্ছে করেই রাখা হয়নি। এতে এক ধরনের গতি আছে।’

লোগো একবারেই চূড়ান্ত হয়েছিল, নাকি কয়েকবার কাজ করতে হয়েছে? নিশানের উত্তর—“প্রথম ধাপে চূড়ান্ত হওয়ার পর কয়েকদফা কাজ হয়েছে। ‘এম’ অক্ষরটি লিখে যে প্ল্যাটফর্ম বোঝানো হয়েছে, প্রথমে তা ছিল না। বিশ্বের ৩৫টি দেশে মেট্রোরেলের লোগোতে ‘এম’ রয়েছে। ওটাকে যুক্ত করার সময় একটু ইনোভেটিভ ওয়েতে করেছি।”

‘মেট্রোরেল দেখতে কেমন সেটাও জানা ছিল না। তাই প্রথম যে রেলটা ব্যবহার করেছিলাম সেটি দেখতে বুলেট ট্রেনের মতো ছিল। পরে যখন মেট্রোরেলের ইঞ্জিন দেখলাম তখন কিছুটা পরিবর্তন করে দেওয়া হলো।’

আরও বললেন, ‘পুরো কাজ শেষ করতে ছয় মাসের মতো লেগেছে। যখন কাজটি হলো আমি ভীষণ উত্তেজিত ছিলাম। অনেক প্রতিষ্ঠানের লোগো করেছি, কিন্তু এতটা ভালো লাগা কাজ করেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হওয়ার আনন্দ অবশ্যই অন্যরকম।’