মানবতাবিরোধী অপরাধ: হবিগঞ্জের ৫ জনের বিরুদ্ধে রায় যেকোনও দিন

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মাওলানা শফি উদ্দিনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে যেকোনও দিন রায় ঘোষণার জন্য মামলাটি সিএভি (অপেক্ষমাণ) রেখেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার অপর আসামিরা হলেন—তাজুল ইসলাম ওরফে খোকন, জাহেদ মিয়া, ছালেক মিয়া ও সাব্বির আহমেদ। তাদের মধ্যে মাওলানা শফি উদ্দিন ও সাব্বির আহমেদ পলাতক।

উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মঙ্গলবার (১৭ মে) চেয়ারম্যান বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান ও গাজী মো. এমএইচ তামিম।

এর আগে ২০১৮ সালের ২১ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২২ মার্চ তদন্ত শুরু হয়। শেষ হয় ২০১৮ সালের ২১ মার্চ। আসামিদের বিরুদ্ধে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্ত শেষে মামলায় মোট ২১ জনকে সাক্ষী করা হয়।

অভিযোগগুলো হলো:

১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবর রাত ২টার সময় আসামি মাওলানা মো. শফি উদ্দিন, মো. তাজুল ইসলাম ও মো. জাহিদ মিয়া তাদের সঙ্গীয় অন্যান্য রাজাকার ও একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে লাখাই থানাধীন মুড়িয়াউক গ্রামে এমএনএ মোস্তফা আলীর (আওয়ামী লীগ সমর্থক) বাড়িসহ প্রতিবেশী ১০/১২টি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে স্বর্ণালঙ্কার, টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে এবং গান পাউডার ছিটিয়ে অগ্নিসংযোগ করে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।

১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবর রাত ৩টার সময় আসামি মো. শফি উদ্দিন মাওলানা, মো. তাজুল ইসলাম ও মো. জাহিদ মিয়া তাদের সঙ্গীয় অন্যান্য রাজাকার ও একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে লাখাই থানাধীন মুড়িয়াউক গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মো. ইলিয়াস কামালের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবা মো. ইদ্রিস মিয়াকে অপহরণ করে হাত-পিঠমোড়া করে বেঁধে নিয়ে একই গ্রামের শান্তি কমিটির সদস্য ইসমাইল মাওলানার বাড়িতে নিয়ে আটক ও নির্যাতন করে।

একই সময় আসামি মো. শফি উদ্দিন মাওলানা, মো. তাজুল ইসলাম ও মো. জাহিদ মিয়া তাদের সঙ্গীয় অন্যান্য রাজাকার ও একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে লাখাই থানাধীন মুড়িয়াউক গ্রামের আব্দুল জব্বারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহানকে খোঁজাখুঁজি করে। তাকে না পেয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহানের বৃদ্ধ বাবা আব্দুল জব্বারকে অপহরণ করে একই গ্রামের শান্তি কমিটির সদস্য ইসমাইল মাওলানার বাড়িতে আটক ও নির্যাতন করে। একই দিন বিকেলে উক্ত রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মিরা অপহৃত ইদ্রিস মিয়া ও আব্দুল জব্বারকে নৌকাযোগে লাখাই থানাধীন (আসামি মো. শফি উদ্দিন মাওলানার বাড়ির নিকট) উজাদার বিলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে মরদেহ পানিতে ফেলে দেয়।