বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলে প্রতারণা

ভুয়া রেফারেন্স ব্যবহার করে সরকারি প্রকল্পে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি প্রতারক চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের বলতো চক্রটি।

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে চক্রের অন্যতম মূলহোতা মনসুর আহমেদ (৩৩) ও তার সহযোগী মোহাম্মদ মহসিন চৌধুরীকে (৫৫) মঙ্গলবার (১৭ মে) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন দলিল ও ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন কাওরান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘তারা বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণের জন্য চলমান সরকারি প্রকল্পগুলোতে অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করতো। তারা বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভুয়া চুক্তিপত্রের ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দেখাতো। দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা চালিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে চক্রটি। বর্তমানে তারা তিতাস নদী ড্রেজিং, আড়িয়াল খাঁ নদী ড্রেজিং ও নদীর তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প, ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের ড্রেনের সংস্কার কাজ, রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি অফিস কনস্ট্রাকশনের কাজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশনের কাজসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার পরিকল্পনা করছিল।’

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, এই চক্রে ৫ থেকে ৭ জন সদস্য রয়েছে। প্রতারণার জন্য বিভিন্ন সময় নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতো তারা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামে বিভিন্ন মোবাইল নম্বর সেভ করতো এবং নিজেরা ওই ব্যক্তিদের নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে চ্যাট করতো। মূলহোতা মনসুর এবং তার সহযোগী ফেসবুকে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নাম ও ছবি ব্যবহার করতো। এসব চ্যাটিং কনটেন্ট বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সামনে উপস্থাপন করে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখাতো।

তারা র‌্যাবকে আরও জানায়, চক্রের আরও একজন সদস্য সাইফুল বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছে। সে সেখান থেকে নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারির দায়িত্বে রয়েছে বলে জানাতো এবং সেখানে বসে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতো। এছাড়া গ্রেফতারকৃত মনসুর এবং চক্রের সদস্যরা অফিসে মিটিংয়ের সময় বেশভূষা পরিবর্তন করে দামি গাড়ি এবং বডিগার্ড নিয়ে পৌঁছে যেত। নিজেদের আরও বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপন করার জন্য বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের বিভিন্ন ছবি দেখাতো।

গ্রেফতার মনসুর সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, প্রথমে স্থানীয় এলাকায় দালালি করতো সে। পরে ঢাকায় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেই। সেখানে কর্মরত থাকাকালীন প্রতারণার বিষয়টি তার মাথায় আসে। পরে ওই এজেন্সির এক কর্মচারীর মাধ্যমে সাইফুলের সঙ্গে পরিচয় হলে সে চক্রটি গড়ে তোলে। তার সহযোগী মহসিন প্রথমে মালিবাগে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতো। এক পর্যায়ে ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণে মহসিনের ফ্যাক্টরি বিক্রি করে দিতে হয়। পরে মনসুরের সঙ্গে মতিঝিলে পরিচয় হলে প্রতারক চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয় সে।