চুরি-ছিনতাইয়ে অবৈধ ওয়াকিটকির ব্যবহার: ধরা ছোঁয়ার বাইরে অপরাধীরা

মোবাইল ব্যবহার করে অপরাধ করলে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকায় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম পরিবর্তন করেছে অপরাধীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মতো করে তারা ওয়াকিটকি ব্যবহার করে। এভাবেই তারা অবৈধভাবে কেনা ওয়াকিটকি ব্যবহার করে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে। আর এতে তাদের গ্রেফতার করতে বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। তবে এসব ওয়াকি টকি যারা দেশে বিক্রি করে, সেই চক্রকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ৩।

সোমবার (২৩ মে) সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

এর আগে রবিবার (২২ মে) র‌্যাব-৩ এবং বিটিআরসি’র যৌথ অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডসহ মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধ ওয়াকিটকি সেট বিক্রয়কারী চক্রের মূলহোতাসহ মোট দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ওয়াকিটকি সেট এবং যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়।

অধিনায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় অবৈধভাবে অপরাধীদের কাছে কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট দীর্ঘদিন ধরে বিক্রি করে আসছে। কিন্তু বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।’

গ্রেফতার দুজন হলো অবৈধভাবে ওয়াকিটকি বিক্রয়কারী অলেফিল ট্রেড করপোরেশনের মালিক মো. আব্দুল্লাহ আল সাব্বির (৩৩) ও তার সহযোগী মো. আল মামুন (২৭)।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেটে অভিযান চালয়ে মোট ১৬৮টি ওয়াকিটকি সেট, ওয়াকিটকি সেটের ব্যাটারি ৩৫টি, চার্জার ৩২টি, এন্টেনা ৬৩টি, মাউথ স্পিকার ৬টি এবং ৬টি ব্যাক ক্লিপ উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার এসব ওয়াকিটকি সেটের ফ্রিকোয়েন্সি ২৪৫-২৪৬ মেগাহার্জ। এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করে রিপিটার ছাড়া অর্ধকিলোমিটার পর্যন্ত যোগাযোগ করা সম্ভব। এছাড়া বহুতল ভবনের মধ্যে উপরতলা হতে নিচ তলায় যোগাযোগ করা সম্ভব। এসব ওয়াকিটকির দাম পাঁচ হতে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ‘দেশের সাধারণ জনগণ ওয়াকিটকি বহনকারী ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে অপরাধীরা ভূয়া ডিবি, র‌্যাব সদস্য, ডিজিএফআই সদস্য, এনএসআই সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ডাকাতি, রোড ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ গুরুতর অপরাধ করে আসছে। এতে করে একদিকে যেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রকৃত সদস্যরা যখন সাদা পোশাকে দায়িত্বপালনে যাচ্ছেন তখন জনসাধারণ তাদের ভূয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভাবছে। এতে এক ধরনের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও ওয়াকিটকির মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপরাধ সংগঠন করলে পরে অপরাধী শনাক্তকরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে; যা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।’

গ্রেফতারকৃত মো. আব্দুল্লাহ আল সাব্বির ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক। সে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি সামগ্রী নিজ হেফাজতে মজুত রেখে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে আসছে। গ্রেফতার আল মামুন ২ বছর ধরে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। এ পর্যন্ত তারা দুই হাজারের বেশি ওয়াকিটকি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অবৈধভাবে বিক্রয় করেছে।