১১ দিনের জেল হেফাজতে পি কে হালদার 

বাংলাদেশে দেড়শ’ কোটি টাকার জালিয়াতিতে অভিযুক্ত ও ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-ইডি’র হাতে গ্রেফতার পি কে হালদারসহ পাঁচ অভিযুক্তকে ১১ দিনের জেল হেফাজতের আদেশ দিয়েছেন কলকাতার ব্যাংকশাল কোর্টের ইডির আদালত। ১০ দিনের ইডি হেফাজত শেষে শুক্রবার (২৭ মে) দুপুরে তাদের আদালতে তোলা হয়। পি কে হালদারসহ আটক বাকিদের আগামী ৭ জুন ফের আদালতে হাজির করা হবে ইডির পক্ষ থেকে।

বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলে পি কে হালদারসহ তার সহযোগীরা বেআইনি ব্যবসা চালু করে। বাংলাদেশ থেকে তথ্য পেয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৪ মে পি কে হালদারসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পি কে হালদারসহ ৫ জনকে আদালতে তোলা হলে প্রথমে ৩ দিনের ও পরে আরও ১০ দিনের হেফাজতে নেয় ইডি। তাদের ছয় জনের কাছ থেকে টাকাসহ বিভিন্ন দেশের পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। তাদের নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালান ইডির গোয়েন্দারা। হেফাজতে থাকাকালীন ইডি অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

শুক্রবার ইডি পক্ষের আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা ১৪ দিনের জেল হেফাজত চেয়েছি। সেই সঙ্গে তাদের জেলেও জেরার অনুমতি দেওয়ার আর্জি জানানো হয়।’ অপরদিকে পি কে হালদারের আইনজীবী হায়দার আলী ও সোমনাথ ঘোষ আদালতকে বলেন, ‘আসামিরা গত ১৪ দিন ধরে ইডির রিমান্ডে ছিলেন। এ সময় তারা কী করেছেন? আসলে উনারা সময় নষ্ট করছেন। এতই যদি তাদের বিদেশি বলা হয়, তাহলে ফরেনার অ্যাক্টসে মামলা দিচ্ছে না কেন?’ উত্তরে অরিজিৎ চক্রবর্তী আদালতকে বলেন, ‘এটা এত সহজ ব্যাপার নয়। এই টাকা বাংলাদেশের, বেআইনিভাবে ভারতে ১০ হাজার কোটি টাকা ঢুকেছে। ভারতের নাগরিক হিসেবে সব নথি আছে হালদারদের কাছে। খুবই গুরুতর বিষয়। এটা একটু গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করুন।’ এরপর বিচারক ১১ দিনের জেল হেফাজতের আদেশ দেন এবং ইডিকে জেরা করার অনুমতি দেন।

পরে অরিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘পি কে হালদারসহ বাকি ৫ জনকে ১১ দিনের জেল হেফাজত নেওয়া হয়েছে। কারণ, আদালতে আমাদের সাবমিশন ছিল, ভারতে পি কে হালদার তার প্রতারণার জাল ছড়িয়েছেন। এর সঙ্গে ইডি যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে, তার কোনও সোর্স অব ইনকাম দেখাতে পারেননি তিনি। বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি নিয়ে এখন অনুসন্ধান চলছে। পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদারের ১৩টি বাড়ি এবং ফ্ল্যাটসহ বোট হাউজ পাওয়া গেছে। এছাড়া ৭টি খালি জমির মধ্যে কয়েকটি পি কে হালদারের নামে, কয়েকটা বেআইনি নামে পাওয়া গেছে। এর পাশাপাশি তিনি বেআইনিভাবে যে অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার করে এনেছেন, তা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেছিলেন। সেই সঙ্গে পি কে হালদারদের নামে ১৩টি কোম্পানিও পাওয়া গেছে।’

ইডি পক্ষের আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার যদি পি কে হালদারকে নিতে চায়, তাহলে সেটা দুই দেশের ব্যাপার। দুই দেশের সরকারের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। জটিলতা কেটে গেলে নিশ্চয়ই নিতে পারবে।’

অপর দিকে আদালতের বাইরে পি কে হালদারের পক্ষের দুই আইনজীবী বলেন, আমরা পি কে হালদার নামে কাউকে চিনি না। আমরা যার হয়ে মামলা করছি, তিনি শিবশঙ্কর হালদার এবং তিনি ভারতীয়।