দিনের ব্যস্ত সময়ে একই পথে মানুষ ও ময়লা

রাজধানীর পান্থপথ। ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ার থেকে কাওরানবাজারের দিকে যাওয়ার পথটিতে উল্টোদিকে একে-একে ঢুকেছে ১৫টি বর্জ্যভর্তি ভ্যান। এসব ভ্যান থেকে উপচে পড়ছে ময়লা, ময়লা থেকে চুইয়ে পড়ছে দুর্গন্ধময় পানি। আশপাশে যানজটে বসে আছেন হাজারও মানুষ। নাকে কাপড় দিয়ে বসে থাকতে না পেরে রিকশা ছেড়ে দিয়ে হাঁটাও দিলেন কেউ কেউ। রাজধানী প্রধান সড়কগুলোর যেখানেই বর্জ্য স্টেশন রয়েছে, সেখানেই গত কয়েকমাস ধরে চোখে পড়ছে এমন চিত্র। 

আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের লক্ষ্যে দুই সিটি করপোরেশন নানা উদ্যোগ নিলেও গত কয়েক মাস ধরে দিনের বেলা রাস্তায় চলতে বেগ পেতে হচ্ছে নগরবাসীকে। দুপুরের পর থেকে উপচে পরা ময়লার ভ্যান প্রধান সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। পঁচা দুর্গন্ধে চলাচল করতে বেগ পেতে হয়। 

কর্তৃপক্ষ বলছে, দিনের বেলা সেকেন্ডারি স্টেশন থেকে বর্জ্যপরিবহনের গাড়ি চলাচল নিষেধ করার কারণে পুরো সার্কেলে অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে। বাসাবাড়ি থেকে ভোরে ময়লা নেওয়ার কথা থাকলেও নাগরিকরা সেটি অনেক বেলা করে দেওয়ার কারণেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। সমাধানের চেষ্টা চলছে।

বর্জ্য (4)

সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ২টার পর থেকে রাজধানীর সবকয়টি বর্জ্য স্টেশনের সামনে প্রধান সড়কগুলোতে সারি বেঁধে ময়লাবাহী ছোটছোট ভ্যানগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। তারা সেই ময়লা স্টেশনে দিতে দিতে রাত ৮টা বাজে। এমন পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পুরো সময় ঢাকা শহরকে যেন আরও বেশি অপরিচ্ছন্ন ও বসবাস অনুপযোগী করে তুলছে।

রাজধানীর কলাবাগান এলাকাতেও বাস স্ট্যান্ডের পাশেই তৈরি হয়েছে বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র। এখানে দুপুরের পর থেকে পান্থপথের অর্ধেকটা জুড়ে ময়লা বোঝাই ভ্যানগুলো উল্টো রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। উৎকট গন্ধে পথচারীসহ স্থানীয়দের এ সময় পথচলা হয়ে পড়ে দায়। রাস্তাজুড়ে দুর্গন্ধ এবং বিভিন্ন স্থানে ময়লা পড়ে থাকতে দেখা যায়।

বর্জ্য (5)

রাজধানীর তালতলা এলাকায় বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র (এসটিএস) নির্মাণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এখানে এটি নির্মাণ করা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দা সালমান তোক্তাদির। তিনি বলেন, এখানে বাসগুলো এসে থামে। শিশুরা এখানে থেকে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাসে বা যানবাহনের অপেক্ষা করে। আগে তাও ময়লা বাইরে থাকতো না। এখনতো বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেমন থাকে, তেমনই ভ্যানগুলোও ঘণ্টার পর ঘণ্টা পঁচা-বাসি বর্জ্য নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। এতে করে একদিকে দুর্গন্ধ অন্যদিকে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, ময়লা লোড করে যখন বড় বড় গাড়ি এলাকা থেকে বের হয় তখন এসটিএসের সামনের সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। দুর্গন্ধে টেকাও দুস্কর হয়ে যায়। 

বর্জ্য (3)

কেন এই সময় ময়লা নিয়ে রাস্তায় অপেক্ষা করছেন, বর্জ্যবাহী এক ভ্যানের চালককে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে সন্ধ্যার মধ্যে স্টেশনে দিতে হবে। তারা রাতে এসব ময়লা ঢাকার বাইরে নিবে। আগে আমাদের সকাল-সকাল এই কাজ (ময়লা সংগ্রহ) করতে হতো। এখন একটু বেলা করে করলেও চলে। সে কারণে সবাই এখন এই সময়ে এসে এখানে লাইন দেয়।’

এই পরিস্থিতি অবগত উল্লেখ করে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বর্জ্য স্টেশন থেকে ময়লার গাড়িগুলো দিনের বেলা চলাচলে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা আসায় একটু অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে। আবার নগরবাসী নিজেদের সুবিধার কথা ভেবে দিনের কাজ শেষে দুপুর বেলা বিভিন্ন পয়েন্টে ময়লা ফেলেন। স্থানীয়ভাবে এসব নিয়ন্ত্রণ করার কারণে এমন ঘটে থাকতে পারে।

বর্জ্য (1)

তিনি বলেন, প্রতিটি এলাকায় ময়লা ফেলার জায়গা দিতেও আপত্তি নগরবাসীর, তাহলে সেটা কীভাবে সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব। সকলের প্রচেষ্টায় কীভাবে কাজটি করা যায় সেসব বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

এবিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম ও সাজ্জাদ হোসেন