অর্থপাচারকারীদের ঢালাও সুযোগ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার শামিল: টিআইবি

বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের যুক্তিতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করা অর্থ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আকারে ফেরত আনার ঢালাও সুযোগ অর্থপাচারকারী তথা দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার শামিল বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সোমবার (৩০ মে) এক বিবৃতিতে অনৈতিক ও আইনপরিপন্থী এসব সুযোগ বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

টিআইবি বলছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, গর্হিত এই অপরাধের জন্য শাস্তির বদলে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। টিআইবি উল্লেখ করেছে পাচারকারীরাও প্রবাসীদের পাঠানো আয়ের মতোই আড়াই ভাগ হারে প্রণোদনা পাবেন। একইসঙ্গে পাচার করা অর্থ ফেরাতে আগামী বাজেটে স্বল্প জরিমানা দিয়ে বিদেশে অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ঘোষণা বা ‘ট্যাক্স অ্যামনেস্টি’ দেওয়ার আভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ ধরনের সুযোগ প্রদান শুধু অনৈতিক ও সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতির সম্পূর্ণ বিপরীতই নয়, অসাংবিধানিকও বটে। অপরদিকে নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে উল্লিখিত প্রক্রিয়ায় পাচারকৃত অর্থ ফেরত পাওয়ার যে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, বাস্তবে তার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

টিআইবি বিদ্যমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থপাচার প্রতিরোধ ও পাচারকারীদের চিহ্নিত করে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থপাচারকারীদের অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক সুযোগ দেওয়া  হচ্ছে, যা দেশের অর্থপাচার রোধে প্রণীত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল।’

দুর্নীতি ও অর্থপাচারকে এভাবে রাজক্ষমার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে চলমান মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘অর্থপাচারের মামলায় অভিযুক্তরাও এ সুযোগ গ্রহণ করতে চাইলে তাদের কি কোনও শাস্তি ভোগ করতে হবে না? এক্ষেত্রে সরকার কি তবে আইনের শাসনের পথ ফেলে আপসের পথে হাঁটবে? এসব বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা জরুরি।

গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর শুধু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালেই আট বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থপাচারের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তার উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘অর্থপাচারের এ তথ্য সরকারের অজানা নয়। এক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতা, দায়িত্বে অবহেলা, সৎসাহসের ঘাটতি এবং এমনকি যোগসাজশের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে অর্থপাচারকারীদের আইনের আওতায় এনে পাচার হওয়া অর্থ যে ফিরিয়ে আনা সম্ভব, তার প্রমাণ হিসেবে সরকারি উদ্যোগে সিঙ্গাপুর থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা হয়েছিল।’

টিআইবি মনে করে, বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের যে তথ্য জিএফআই’র মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা  প্রকাশ করে, সেটি আংশিক। তারা শুধু বাণিজ্যের আড়ালে অর্থপাচারের তথ্য দেয়। বাস্তবে এ অপরাধের প্রক্রিয়া ও গভীরতা আরও অনেক বেশি। তাই অর্থপাচার প্রতিরোধ ও পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা এবং এই অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা অন্যতম রাষ্ট্রীয় প্রাধান্য।