করোনাকালে খাদ্য অনিশ্চয়তায় ভুগেছেন নারীরা: গবেষণা

করোনাকালে ১৯ বছর বয়সী এক নারী গৃহকর্মী বলেছিলেন—‘আমরা করোনাকে ভয় পাই না, আমাদের ভয় হয় ক্ষুধায় মারা যাবো।’ অপর এক নারী গৃহকর্মী বলেন, ‘এখন হয়তো বাড়ি ভাড়া দিতে পারছি। কিন্তু করোনাকালে পারিনি। এমনকি পর্যাপ্ত খাবারের জন্যও টাকা ছিল না।’ ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়-জেমস পি গ্র্যান্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ’র এক জরিপকালে এসব কথা জানান নারীরা। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে তিন ধাপে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

সোমবার (১৩ জুন) ব্র্যাক সেন্টারের অডিটোরিয়ামে গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. অতনু রাব্বানী এবং সহযোগী গবেষক মৌমিতা ইসলাম।

গবেষকরা জানান, পুরুষের তুলনায় নারীরা সবচেয়ে বেশি খাদ্য অনিশ্চয়তায় ভুগেছেন। খাদ্য অনিশ্চয়তা থেকে মানসিক রোগ কিংবা বিষণ্ণতা তৈরি হতে পারে।

ড. অতনু রাব্বানী বলেন, ‘আমাদের সার্ভে বাংলাদেশ, কেনিয়া ও নাইজেরিয়া—এই তিনটি দেশে করেছি। নাইজেরিয়া ও কেনিয়ায় আমাদের টেলিফোনে সার্ভে করতে হয়েছে। আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, বাংলাদেশের তুলনায় সেসব দেশে জরিপ করা বেশ কঠিন। যারা স্যাম্পলিংয়ে ছিল সেই ১৩০০ মানুষকে পাঁচবার জরিপ করা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ভাতের ওপর নির্ভরশীলতা কিছুটা কমে গিয়েছিল। ২০২০ সালে এক-তৃতীয়াংশ হলেও পরবর্তী সময়ে ৫০ শতাংশের মতো কমে এসেছে ২০২১-এর মাঝামাঝি সময়ে। আবার অপরদিকে মাছ, মাংস, ডিম দুধ অর্থাৎ প্রোটিনের দিকে তাকালে দেখা যায়, এটা ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা বেশি ছিল। কিন্তু পরে তা কমে এসেছে। পরে দেখা গেছে, ভাত গ্রহণ করা ঠিক রেখেছে, কিন্তু মানসম্মত খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমে এসেছে। ফলমূলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। তবে সবজির ক্ষেত্রে অবস্থা কিছুটা ভিন্ন। সুতরাং, ভাত এবং শাকসবজি গ্রহণ করা ঠিক রেখেছে মোটামুটি, কিন্তু অন্যগুলো কমিয়ে দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে ছিল, তখন লিঙ্গভিত্তিক পরিসংখ্যান সমান সমান ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি যখন ধীরে ধীরে উন্নতি হয়েছে, তখন পুরুষরা দেখা গেছে যে দ্রুত ভালোর দিকে গেছে। কিন্তু লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বেড়েছে প্রোটিনের ক্ষেত্রে।’

মৌমিতা ইসলাম বলেন, ‘যখন আমরা খাদ্য অনিশ্চয়তা নিয়ে কথা বলতে গিয়েছি, এমনও হয়েছে যে তার ঘরের পরবর্তী খাবার কী রান্না হবে, তা নিয়ে উনি নিশ্চিত না। অনিশ্চয়তাটি এই পরিমাণে চলে গিয়েছিল। বেশিরভাগই আমাদের বলেছেন যে খাবারের অসুবিধা কিংবা বাজার কোত্থেকে আসবে, এ নিয়ে নারীরা স্বামীদের খুব একটা চাপ দিতে চায়নি। তাদের কাছে মনে হয়—বাজার কিংবা খাবার খরচের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে স্বামীরা চিন্তা করেন। এই সমস্যাগুলো তারা নিজেদের মতো করে সমাধান করতে চেয়েছেন। আমাদের দুটি ফলোআপ রাউন্ডে দেখেছি, খাদ্য অনিশ্চয়তা ছিল। লকডাউনের পর যদিও অনেকেই চাকরি ফিরে পেয়েছেন, কিন্তু আয় আগের মতো হয়নি।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘গবেষণা তথ্য ভবিষ্যতে করণীয় নির্ধারণে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করছি।’

গবেষণার তথ্য উপস্থাপনের পর প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন—ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র পরিচালক ড. নাদিয়া বিনতে আমিন, অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শারমিন নিলোমী এবং ডেইলি স্টারের সিনিয়র ডেপুটি এডিটর আশা মেহেরিন আমিন। আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।