শিক্ষক হেনস্তায় জড়িতদের বিচার দাবি ঢাবি শিক্ষার্থীদের

সাভারে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা এবং নড়াইলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে এক শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তায় জড়িতদের বিচার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৮ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী, জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন অংশ নেয়।

সমাবেশে বক্তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক নির্যাতনে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি  এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

সমাবেশে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে এখানে বক্তব্য দিচ্ছি, আমি জানি না কতটুকু নিরাপদ। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করছি। কারণ, আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী। সনাতন ধর্মের প্রত্যেকটি শিক্ষক আজ এরকম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।’

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতাকে যদি শেকড় থেকে তুলে না আনা যায়, তাহলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। এখনই সময় রশি টেনে ধরার। যে কুচক্রী মহল এর সঙ্গে যুক্ত আছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ‍উন্মুক্ত রাস্তায় জনসম্মুখে তাদের বিচার করা উচিত। তাহলেই শিক্ষা হবে।’

শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় ঢাবি শিক্ষক সমিতির নীরবতার সমালোচনা করে অচিরেই ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি ও প্রতিবাদ সমাবেশ করার আহ্বান জানান অধ্যাপক মিহির লাল সাহা। 

সমাবেশে জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সভাপতি কাজল দাস বলেন, ‘যে প্রজন্ম শিক্ষককে জুতার মালা গলায় পরায়, যে প্রজন্ম শিক্ষককে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে, সেই প্রজন্মের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। যে প্রজন্মের এখন শিক্ষা-দীক্ষা ও গবেষণায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা, সেই শিক্ষার্থীরা আজ ইয়াবা, নেশায় আসক্ত হয়ে নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে।’

ঢাবি শিক্ষকরা ওই ঘটনার প্রতিবাদ না জানানোর সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমরা লজ্জিত। যেখানে শিক্ষক সমাজ এখানে দাঁড়ানোর কথা, সেখানে আমরা দাঁড়িয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা এই সাম্প্রদায়িকতাকে কখনও মেনে নেয়নি, নেবেও না। যেকোনও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার থাকবো।’

জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণ বলেন, ‘যে শিক্ষকরা জাতির মেরুদণ্ড, স্ট্যাম্পের আঘাতে তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। আমরা দেখছি, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে নিরীহ শিক্ষক। আজকে তারা মন খুলে পড়াতে পারেন না। মনের ভাব প্রকাশ করতে গেলে, কথিত ধর্ম অবমাননার অপবাদে গণপিটুনি খেতে হয়, নতুবা জেলে যেতে হয়। এই বিষ দাঁত আমাদের ভেঙে দিতে হবে। যেভাবে পারি, এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’