ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমারের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে: কমিশন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাকের সম্পত্তি দখল করে রেখেছেন তার প্রতিবেশীরা। তার মত এমন একজন স্বনামধন্য শিক্ষকের জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দীর্ঘ আইনি লড়াই করেও নিজ জমি ভোগ দখল করতে না পারার অভিযোগ ‘অত্যন্ত অনভিপ্রেত’ উল্লেখ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বলছে, ‘অধ্যাপক বসাকের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে মর্মে কমিশন মনে করে।’

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক ‘আদেশ নামায়’ এমন মন্তব্য করেছে কমিশন।

আদেশ নামায় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাকের জমিটি ভোগ দখল নিশ্চিত করে আগামী ২৪ আগস্টের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। 

আদেশনামায় বলা হয়, ‘জমি উদ্ধারে ১৮ বছর ধরে হয়রানির শিকার ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক’ সংক্রান্ত শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদটির প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয় যে, অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান পদার্থবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক।

অভিযোগ উঠেছে, ৮২ বছর বয়সী খ্যাতিমান এই শিক্ষাবিদের সম্পত্তি দখল করে বিগত ১৮ বছর ধরে হয়রানি করছেন তার প্রতিবেশী। সেই প্রতিবেশী অধ্যাপক বসাকের সম্পত্তি দখল করে রেখেছেন। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে জিতলেও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সেই জমিকে তিনি দখলমুক্ত করতে পারছেন না। প্রতিবেশী কোনোভাবেই দখলে নেওয়া জমি ছাড়ছেন না। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে এসব যন্ত্রণায় তিনি মানসিক পীড়া ও অনিরাপদ বোধ করছেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশন বলছে, রাজশাহী মহানগরীর সাগরপাড়া এলাকায় অধ্যাপক বসাকের নিবাস। বাড়ি ভিটার জমিটি বসাকের স্ত্রী দেবিকা বসাকের নামে ছিল। ২০২০ সালের নভেম্বরে স্ত্রী দেবিকা বসাকের মৃত্যুর পর নিঃসন্তান বসাকই প্রাচীন এ বাড়িটির মালিক হন।

অরুণ কুমার বসাক জানান, তিনি জীবনভর পড়াশোনা ও গবেষণা নিয়েই থেকেছেন। নিজের সম্পদ সম্পত্তির খোঁজখবর রাখতে পারেননি। ২০০৩ সালে তার প্রতিবেশী ইয়াহিয়া ফেরদৌস নিজের জমিতে দুই তলা বাড়ি তৈরি করেন। ইয়াহিয়া ফেরদৌস সাগরপাড়া ওয়াকফ এস্টেট নামের একটি এস্টেটের মতোয়াল্লি বা তত্ত্বাবধায়ক। বাড়ি তৈরির সময় ইয়াহিয়া ফেরদৌস প্রতিবেশী বসাকের বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে দুই ফুটের বেশি জায়গা দখল করে নিজের বাড়িটি নির্মাণ করেন।

প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয় যে, দখলদার ফেরদৌস রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অবৈধ ইমারত অপসারণ নোটিশের কার্যকারিতা বন্ধে কৌশলে রাজশাহীর একটি আদালতে মামলা করেন। অভিযোগকারী দেবিকা বসাককে হয়রানি করার জন্য দখলদার ফেরদৌস এস্টেটের জমি দখলের উল্টো অভিযোগ আনেন তার বিরুদ্ধে। অধ্যাপক বসাক উচ্চ আদালতের রায় পাওয়া সত্ত্বেও তার জমির দখল পাচ্ছেন না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।