X
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রাবি অধ্যাপক হত্যায় দুই আসামির রিট খারিজ, ফাঁসি কার্যকরে বাধা নেই

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৪ মে ২০২৩, ১৫:৪৩আপডেট : ১৪ মে ২০২৩, ১৭:৩৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চাওয়া রিট খারিজ (উত্থাপিত হয়নি মর্মে) করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে আসামিদের ফাঁসি কার্যকরে বাধা রইলো না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

রবিবার (১৪ মে) বিচারপতি মো. জাফর আহমেদ ও মো. বশির উল্ল্যার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। অন্যদিকে বাদীপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা, অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী, শাকিলা রওশন এবং নিহত ড. তাহেরের কন্যা অ্যাডভোকেট সাগুফতা তাবাস্সুম ইসলাম প্রমুখ। আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। 

এর আগে গত ৭ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। দুই আসামির পক্ষে তাদের ভাই ও স্ত্রী রিটটি দায়ের করেন।

রিট আবেদনে বলা হয়, এ মামলায় আসামিদের আটক, গ্রেফতার ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার ব্যত্যয় হয়েছে। তাই এক আসামির ভাই ও আরেক আসামির স্ত্রী পৃথক রিট আবেদন করেছেন। রিটে আসামিদের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চাওয়া হয়েছে।

গত ২ মে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ও যাবজ্জীবন দণ্ডিত এক আসামির আবেদন খারিজের রায় প্রকাশিত হয়। ফলে আইন অনুসারে রায়টি বিচারিক আদালত হয়ে কারাগারে যাবে। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারবেন।

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানিয়েছিলেন, রিভিউ রায় প্রকাশের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। সে আবেদন খারিজ করা হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।

এর আগে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

এ মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ। এ হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চার জনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।  

দণ্ডিতরা হলো, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসারের কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সমন্ধি আব্দুস সালাম। খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।

২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।  

ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলো- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম। ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই আসামি হলো, মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর বড় ভাই আব্দুস সালাম।

এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন। ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এরপর আসামিরা রিভিউ আবেদন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রিভিউর ওপর শুনানি শুরু হয়।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, আসামিদের স্বীকারোক্তিগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হত্যার এ ষড়যন্ত্রে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনই মুখ্য এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করছিলেন। আমাদের এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন শুধু প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পেতেই ড. তাহেরকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন। তার ধারণা ছিল, ড. তাহের বেঁচে থাকলে অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব না।

রায়ে আরও বলা হয়, ‘আমাদের এও বলতে দ্বিধা নেই যে, আপিলকারী জাহাঙ্গীর আলম এবং আবেদনকারী আব্দুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য অধ্যাপক তাহেরকে হত্যার জন্য ড. মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন।’

পরে গত ২ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আসামিদের করা আবেদনের খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৮ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।

/বিআই/ইউএস/
সম্পর্কিত
টাকা আত্মসাৎ: গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তার দুই বছর কারাদণ্ড
ইজিবাইকচালক হত্যা মামলায় ৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড
ডাটাবেজ প্রজেক্টের নামে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশ
সর্বশেষ খবর
তাইওয়ানকে হুমকি দেওয়া বন্ধ করুন: উইলিয়াম লাই
তাইওয়ানকে হুমকি দেওয়া বন্ধ করুন: উইলিয়াম লাই
২০ ঘণ্টা পর মুক্ত সৈয়দপুরের সেই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী
২০ ঘণ্টা পর মুক্ত সৈয়দপুরের সেই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে চলেছে রকমারি ডট কম
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে চলেছে রকমারি ডট কম
বিছানায় পড়ে ছিল স্ত্রীর লাশ, ঘরের আড়ায় ঝুলছিলেন স্বামী
বিছানায় পড়ে ছিল স্ত্রীর লাশ, ঘরের আড়ায় ঝুলছিলেন স্বামী
সর্বাধিক পঠিত
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত
রাইসির বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ভিডিও প্রকাশ
রাইসির বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ভিডিও প্রকাশ
ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, জানালেন ওবায়দুল কাদেরঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
এ আর রাহমানের মুখে লালন ফকির থেকে শেখ হাসিনা...
কান উৎসব ২০২৪এ আর রাহমানের মুখে লালন ফকির থেকে শেখ হাসিনা...
ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া
ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া