নর্থ সাউথের ট্রাস্টিদের অপরাধ গুরুতর বিধায় জামিনে বাধা

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ট্রাস্টি উচ্চ আদালতে আগাম জামিন নিতে গেলে আদালত শাহবাগ থানাকে গ্রেফতারেরর নির্দেশ দেন। এরপর একাধিকবার জামিনের আবেদন করলেও বিচারিক আদালত তাদের জামিন দেননি। জামিন না মঞ্জুর করে আদালত বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং অপরাধে মামলা করা হয়েছে। মানি লন্ডারিং একটি গুরুতর অপরাধ।’

গত ৩০ জুন ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্য জামিন আবেদন করলে রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ জামিনের আবেদন নাকচ করেন।

বিচারক বলেন, ‘অভিযুক্তরা সমাজে বিত্তশালী ও স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বটে। কিন্তু তারপরও তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং অপরাধে মামলা করা হয়েছে। মানি লন্ডারিং একটি গুরুতর অপরাধ।’

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। গত ২২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্য আত্মসাতের অভিযোগে করা এ মামলায় উচ্চ আদালতে আগাম জামিন নিতে গেলে আদালত তাদের জামিন না দিয়ে শাহবাগ থানাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। পরের দিন ২৩ মে বিচারিক আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই থেকে ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্য কারাগারে রয়েছেন। এজাহারভুক্ত দুই আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন।

ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যসহ ছয় জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

গত ২৪ মে এ মামলার পলাতক আসামি আজিম উদ্দিন আহমেদ ও আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী এবং ২৬ মে ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিত ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ আবেদন মঞ্জুর করে ছয় আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ

গত ২৩ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী মামলার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিত বিচারক চার আসামিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারাফটকে একদিনের জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।

মামলার অভিযোগে যা বলা হয়েছে

মামলার অভিযোগে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্য অনুমোদন/সম্মতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে ৯০৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমির দাম ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা বেশি দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনার পারও বেশি দাম দেখিয়ে তারা প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা প্রদান করেন। পরে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন। পরে নিজেরা ওই এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

এ ঘটনায় গত ৫ মে দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ক ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন— ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যরা-এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান। অপর দুই আসামি হলেন, চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ ও আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।

রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, এই ছয় আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, দুদক ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি হওয়ার পর আসামিরা উচ্চ আদালতে আগাম জামিন চাইতে গেলে আদালত তাদের জামিন না দিয়ে শাহবাগ থানাকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। পরে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে তাদের একদিনের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। গুরুতর অপরাধ বিধায় আদালত তাদের জামিন আবেদন নাকচ করেন।

মামালার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী জানান, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে দায়ীদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

অপরদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম অনি বলেন, ‘শুধু অনুমানের ভিত্তিতে এ মামলা করা হয়েছে। অনুমোদনের ভিত্তিতে মানি লন্ডারিং মামলা হয় না। আর দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা হচ্ছে সরকারি কর্মচারী কর্তৃক আত্মসাতের অভিযোগ। এখানে কোনও অভিযুক্তই সরকারি কর্মচারী নন। বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।’