বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে কারা, উদঘাটন হওয়া উচিত: প্রধান বিচারপতি

বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে কারা কলকাঠি নেড়েছেন— তা উদঘাটন হওয়া উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ এন এম বসির উল্লাহ রচিত ‘বিচারক জীবনের কথা’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ১৯৭১ সালে জন্ম হয় বাংলাদেশের। সে জন্য বাংলাদেশের কথা বলতে গেলে, বাংলা ভাষার কথা বলতে গেলে, বাংলার মানুষের কথা বলতে গেলে বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি ১৯৭৫ সালে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে ফিরে এসে খুব গর্ব করে বলেছিলেন— ‘বাঙালিরা আজ মানুষ হয়েছে'। বাঙালিরা কী আসলেই মানুষ হয়েছে? পঁচাত্তরের ঘটনায় কী মনে হয়— বাঙালিরা মানুষ হয়েছে? কারণ বঙ্গবন্ধুকে যারা গুলি করেছেন তারা বাঙালি— বঙ্গবন্ধুকে সামনে থেকে যারা গুলি করেছেন এবং স্বীকার করেছেন যে আমরা খুন করেছি। প্রশ্ন হচ্ছে, শুধুমাত্র কী তারাই বলেছেন? নাকি অনেক বড় চক্র এর পেছনে কাজ করেছেন, যেটি এখনও উদঘাটন হয়নি। কিন্তু এটির উদঘাটন হওয়া উচিত— বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে কলকাঠি কারা নেড়েছেন।

তিনি বলেন, এখন আমরা যারা বলি যে ঘুষ খাই না, তারা কি এমন ঘৃণা দেখেছেন? আমরা বোধ হয় ঘৃণা করতে ভুলে গেছি। আমার কাছে রোজ ৪০ থেকে ৫০টা চিঠি আসে। প্রত্যেকটা চিঠি আমি খুলে পড়ি। বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে আমার দায়িত্ব হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের কষ্ট-দুঃখ দূর করা। তারা প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে লিখে।

বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, 'গত ছয় মাসে অধস্তন আদালতে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা বেড়েছে। ৩০ থেকে ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত নিষ্পত্তির হার বেড়েছে। এটা অধস্তন আদালতের বিচারকদের প্রচণ্ড পরিশ্রমের ফল। তাদের এই পরিশ্রমের কথা কেউ লিখেন না। আমরা বাহবা চাচ্ছি না। কিছুটা হলেও গতি বেড়েছে। মানুষের দুর্গতি কিছুটা হলেও কমেছে। আসুন সবাই মিলে চেষ্টা করি যাতে তাদের যত দ্রুত সম্ভব আদালতের বারান্দা থেকে বাড়ির বারান্দায় ফেরত পাঠাতে পারি।'

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান বলেন, 'আমরা এমনিও জানি কারা ষড়যন্ত্রকারী, কারা কী করেছে। একবারে জানি না, সেই কথা নয়।'

আপিল বিভাগের আরেক বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, একটি কমিশন হওয়া উচিত। কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল, দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কারা সম্পৃক্ত ছিল। একটি কমিশনের মাধ্যমে এটি উদঘাটিত না হলে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে না যে কী ঘটনাটি সেদিন ঘটেছিল। শারীরিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে কয়েকজন সামরিক বাহিনীর লোক। তাদের বিচার হয়েছে, ফাঁসি হয়েছে। এটাই কী যথেষ্ট? ইতিহাসকে সঠিক পথে আনার জন্য আমার মনে হয়, আমি যে প্রস্তাব রেখে গেলাম, সরকার এটি বিবেচনা করবে।

আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।