অথচ দুইদিন আগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে তিনি বলেছিলেন, শাহআলী থানার পুলিশ ও পুলিশের সোর্স তার বাবাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তারা এর বিচার চায়। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। তাদের পরিবারেরও অভিযোগ ছিল তাই। তবে ঘটনার দুইদিন পর তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।
বাংলা ট্রিবিউনকে রাজু বলেন,‘ঘটনার সময় আমরা কেউ কাছে ছিলাম না। আমরা কোনও পুলিশও চিনি না। দেলোয়ারকে আমরা পুলিশ কনস্টেবল ভাবতাম। আমরা তার কথাই বলেছিলাম। তার নামে মামলা করেছি। আর কোনও মামলা করব না। প্রথমে হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছিল। সেটাই এখন হত্যা মামলা হবে। আমরা কোনও পুলিশের নামও জানি না। তবে আগুন লাগার পর গিয়ে সেখানে পুলিশ দেখছি। তারা আগুন দিয়েছে কিনা তাও জানি না।’
অথচ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢামেক হাসপাতালের মর্গে বসে রাজু, তার স্ত্রী ও বোন কয়েক পুলিশের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেছেন। রাজুর স্ত্রী মনি আক্তার নিজেই ঘটনার সময় বাসার সামনে থেকে পুলিশের আগুন দেওয়ার দৃশ্য দেখেছেন বলে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। সে আগুন দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। যা বাংলা ট্রিবিউনের কাছে রেকর্ড রয়েছে। অথচ এখন তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। স্ত্রীর অভিযোগের কথা তুলে ধরলেও তিনি বলেন,‘আমরা সবাই গিয়ে পুলিশ দেখেছি। তবে পুলিশ তার গায়ে আগুন দিয়েছে কিনা তাতো দেখিনি।’
তাহলে কি পুলিশের বিরুদ্ধে আপনাদের কোনও অভিযোগ নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে রাজু বলেন,‘অভিযোগ থাকবে না কেন? যারা দেখছে তারা তো পুলিশের কথা বলছে। আমরা তো কেউ দেখিনি। আমরা দেলোয়ারের কথা বলছিলাম। তাকে আমরা পুলিশ ভাবছিলাম। তার কাছে হাতকড়া থাকে। তাই তাকে পুলিশের মত মনে করছি। তবে সে পুলিশ না।’
পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলেছিলেন, আপনি বা আপনার পরিবার এখন কোনও মামলা করবেন কিনা? এর উত্তরে নিহত বাবুল মাতবরের ছেলে রাজু বলেন,‘আমরা আপাদত আর কোনও মামলা করব না। মামলা তো করাই আছে?’
মামলা তদন্তে পুলিশের কোনও কর্মকর্তা আপনাদের সঙ্গে কথা বলেছে? রাজু এর উত্তরে বলেন, একজন আসছিল। তিনি বলেছেন, আগের মামলাটি হত্যা মামলা হবে। সেখানে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। কেউ জড়িত থাকলে তাদের নাম এখানে দেওয়া যাবে।’
রাজু বলেন,‘আমার আব্বা খুব সাহসী ছিলেন। গায়ে আগুন নিয়ে পুলিশের সোর্স দেলোয়ারকে ধরার চেষ্টা করেছিল। মৃত্যুর ১৫ মিনিট আগে পুলিশের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। তখন তিনি সবার নাম বলে গেছেন। পুলিশের কাছে সেই রেকর্ড আছে।’
অর্থের অভাবে বাবার নামে মিলাদ পড়াতে পারছেন না উল্লেখ করে রাজু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামীকাল মিলাদ পড়াতে চাইছিলাম। কিন্তু টাকার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা টাকা দিবে। তারপর আগামী পরশু মিলাদ পড়াবো। কোনও কমিশনার, এমপি ও মন্ত্রী আমাদের সাহায্য করেনি এখনও। কেউ খোঁজ নেয়নি।’
বুধবার রাতে শাহ-আলী থানা পুলিশ ও তাদের কথিত সোর্স গুদারাঘাটের ছোট্ট চায়ের দোকানে বাবুলের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তার মৃত্যু হয়। ওই দিন নিহতের ছেলে রাজু বাংলা ট্রিবিউনের কাছে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ তার বাবাকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।
এই ঘটনায় শাহআলী থানার পাঁচ পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়। ওসি একেএম শাহীন মন্ডলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। তবে কোনও কমিটি এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. কায়ুমুজ্জামান।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত চলছে। শিগগিরই তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। দোষীদের কোনও ছাড় হবে না।’
/এআরআর/এমএসএম