৮ বছর বেতন-ভাতা বন্ধে অমানবিক জীবন, পরিষদে আবেদন

ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির নাটকের ইন্সট্রাক্টর। হঠাৎ বদলি করে দেওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, তাও কালচারাল অফিসার পদে। পুনর্বিবেচনার দাবি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন করে সাড়া না পাওয়ায় উচ্চ আদালতে রিট করেন। উচ্চ আদালত শিল্পকলার সেই বদলি আদেশে স্থিতাবস্থা জারি করলেও কেবল মৌখিক আদেশে তার বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে দাবি করেন শেখ মুহম্মদ এহসানুর রহমান। গত ৮ বছরে তার বেতন হয়নি। আলাদা করে তিনি চাকরিতে নেই এমন কোনও আদেশও জারি হয়নি। করণীয় জানতে ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পরিষদের সভাপতি বরাবর একটি আবেদন করেছেন তিনি। ১ সেপ্টেম্বর পরিষদের সভায় সে বিষয়ে আলাপ হলে ৮ বছরের মানবেতর জীবনের অবসান ঘটবে, এমনটাই আশা এহসানের।

সম্প্রতি দাখিলকৃত আবেদনে জানানো হয়, ২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর এহসানুর রহমান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগে নাটকের ইন্সট্রাক্টর পদে যোগ দেন। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখ তাকে জেলা কালচারাল অফিসার করা হয়। যা বিদ্যমান প্রবিধানমালা-১৯৯৪-এর লঙ্ঘন। এরপরে তিনি ২০ এপ্রিল বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করে সন্তোষজনক সাড়া না পেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দাখিল করেন।

হাইকোর্ট প্রাথমিক শুনানি শেষে সেই বদলির আদেশের বিরুদ্ধে স্থিতাবস্থা জারি করেন ও বদলি বিষয়ে আদেশ কেন বাতিল করা হবে না জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন। ফলে সেই স্থিতাবস্থা এখনও বহাল আছে। আইনজীবীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা তাৎক্ষণিকভাবে শিল্পকলা কর্তৃপক্ষকে অবহিতও করা হয়। চিঠিতে আবেদনের জায়গায় তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পরিষদ সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ, সেহেতু পরিষদের কাছে আমার প্রতি সংঘটিত অন্যায়ের প্রতিকার প্রার্থনাপূর্বক বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ ও নিয়োগকৃত পদে বহালের বিবেচনা আশা করছি।

কীভাবে জীবনযাপন করতে হচ্ছে জানাতে গিয়ে ভুক্তভোগী শেখ মুহম্মদ এহসানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত ৫ বছর বাড়ি ভাড়া বকেয়া থাকায়, বেতন না পাওয়ায় আমি পথে বসেছি বলা যেতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের কোনও আইনে এভাবে বেতন ভাতা বন্ধের বিধান নেই। এতে আমার মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। শিল্পকলা একাডেমি পরিষদের গৃহীত সিদ্ধান্তে ২০২১ সালের ২৪ জুন বদলিকৃত কালচারাল অফিসারদের অবমুক্ত করার পরেও তারা বদলি করা কর্মস্থল যোগদান করেননি এবং এখনও বেতন ভাতা পাচ্ছেন। অথচ আমার বেতন মৌখিক আদেশে বন্ধ করে দেওয়া হলো। একই প্রতিষ্ঠানে দুই নিয়ম কীভাবে চালু থাকে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা হাসান মাহমুদ জানান, আমি ওই সময় ছিলাম না। ফলে বিস্তারিত জানা নেই।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, এহসানুর রহমানকে যেমন অন্য পদে বদলি করা হয়েছে, তেমন অনেক বদলি এখানে হয়। অফিসের স্বার্থে সেসব দায়িত্ব অনেকেই পালন করেন। আমরা শুনেছি, এহসানুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়ে জয়েন করে দায়িত্ব পালন করেননি বিধায় বেতন বন্ধ রয়েছে। তবে এর সত্যতা ঠিক জানা নেই।