শুক্রবারে শিল্পকলা একাডেমি

নাচ দিয়ে শুরু নাটকে শেষ, বাড়ছে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড়

জীবিকার তাগিদে রাজধানীর কর্মব্যস্ত মানুষের জীবন ঘোড়া হাঁকিয়ে চলার মতো। সপ্তাহে কেবল শুক্র ও শনিবার মেলে খানিকটা অবকাশ। এই দুই দিন নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মুখরিত থাকে সেগুনবাগিচার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারি কাটিয়ে ক্রমেই শিল্পকলা চত্বরে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড় বাড়ছে।

আজ শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) ছিল বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার উদ্যোগে ‘৭ম বয়স ও বিষয়ভিত্তিক জাতীয় নৃত্য প্রতিযোগিতা’র ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার প্রাথমিক বাছাই পর্বের দ্বিতীয় দিন। ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতা চলবে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই প্রতিযোগিতার নাচের অনুষ্ঠান দিয়ে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত একাডেমি চত্বরে ছিল বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি। 

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত, নৃত্যকলা ও আবৃত্তি ভবনের মহড়া কক্ষে সকাল ১০টায় শুরু হয় জাতীয় নৃত্য প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেয় বিপুলসংখ্যক নৃত্যশিল্পী। নাচের ঝংকারে নিজেকে সেরা করার এই লড়াই চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। আগামীকাল শনিবারও যথারীতি চলবে একইভাবে এই কসরত। এতে বিচারের মানদণ্ডে উত্তীর্ণদের নিয়ে আগামী ২২, ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর এখানেই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। পুরো আয়োজনের সঙ্গে রয়েছে শিল্পকলা একাডেমি।

শিল্পকলা

বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মীনু হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২০১৯ সালের পর করোনা মহামারির কারণে প্রতিযোগিতা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এবার ৪৮টি জেলায় আমরা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। প্রতিটি জেলা থেকে ৩ জন করে প্রতিযোগী বাছাই করা হচ্ছে। এতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আগামীতে সকল জেলায় প্রতিযোগিতাটি করার পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা।

এদিকে, শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলে ভিন্ন ধরনের আলাদা আলাদা নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে। এর মধ্যে সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ফেইম স্কুল অব ড্যান্স, ড্রামা অ্যান্ড মিউজিকের 'প্রতীক্ষা অন্তহীন' নাটক মঞ্চায়িত হয়। স্যামুয়েল ব্যাকেটের লেখা 'ওয়েটিং ফর গডো' নাটকটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন কবীর চৌধুরী। অসীম দাশের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হওয়া নাটকটি দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

শিল্পকলা (3)

টিকিট বিক্রেতা আজমল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, হলটির আসন সংখ্যা ৭০০। টিকিট বিক্রি হয়েছে ৪৫০টি। টিকিটের দাম নেওয়া হয় ৫০০, ৩০০ ও ২০০ টাকা করে। দর্শকদের ব্যাপক সাড়া দেখে তারা অভিভূত হয়েছেন।

ওদিকে, শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটারে মঞ্চায়িত হয়েছে অরণ্য নাট্যদলের ৬২তম প্রয়োজনা 'কহে ফেসবুক'। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন মামুনুর রশীদ। প্রযুক্তি নির্ভরতার এই যুগে মানুষের চিরদিনের চাওয়া 'ছোঁয়া, স্পর্শ' হলেও স্পর্শহীন জীবনের গল্প উঠে এসেছে এই নাটকে।

এই নাটকের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা রুহুল আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘৩০০ ও ২০০ টাকা করে টিকিট বিক্রি করেছেন তারা। ছুটির দিন হওয়ায় নির্ধারিত ১০০ আসনের প্রায় সব টিকিট বিক্রি হয়েছে।’

শিল্পকলা (1)

অন্যদিকে শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালার থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় ‘পুণ্যাহ’ নাটক। নাট্যকেন্দ্রের প্রযোজনার নাটকটি রচনা করেছেন ছিলেন বদরুজ্জামান আলমগীর, নির্দেশনায় ছিলেন ইউসুফ অর্ক। নাটকটির টিকিট বিক্রেতা শরীফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ২৭৫ আসনের হলটি হাউজফুল ছিল।

এদিকে, আসাদ সরকারের পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘জীবন পাখি’ প্রিমিয়ার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে। এতে সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

শিল্পকলা (2)

এ ছাড়া শিল্পকলার ৭ম তলায় অনুপম বিশ্বাসের শিষ্যরা আয়োজন করেন 'গুরু সান্নিধ্য'। এতে সারাদেশ থেকে আসা ৬৫ জন ভক্ত ও দোতারা বাদক অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলে।

আজিমপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে নাটক দেখতে এসেছিলেন অনন্যা দেব নামে এক তরুণী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকায় এমনিতে বিনোদনের জায়গা কম। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে শিল্পকলা আবারও মুখরিত হয়ে উঠছে, ভালো লাগছে। অনেকেই আসছেন, অনুষ্ঠানগুলোও জমজমাট হয়ে উঠছে।’