ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযানের ঘোষণা ডিএনসিসি মেয়রের

ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) থেকে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। ডিএনসিসি’র দশটি অঞ্চলে দশটি টিম এই অভিযান পরিচালনা করবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে। এডিসের লার্ভা পেলেই নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা।

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানী উত্তরায় ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন দক্ষিণখানে মধ্য আজমপুর এলাকায় এডিস মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযানে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম এসব কথা জানান।ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রচারাভিযানে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম

বাসা-বাড়ি-অফিসে জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে মেয়র বলেন, 'আইন অনুযায়ী নিয়মিত মামলা হবে। কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনার বাড়ি বা স্থাপনার ভেতরে, বাইরে, আশপাশে কোথাও পানি জমে থাকলে এখনি ফেলে দিন। ডেঙ্গু থেকে আপনি সুরক্ষিত থাকুন, আপনার পরিবার ও প্রতিবেশীকে সুরক্ষিত রাখুন। বাড়িতে লার্ভার চাষ করে শাস্তি না পেয়ে বরং লার্ভার উৎস ধ্বংস করে পুরস্কৃত হোন।'

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘ধারণা করা হয়েছিল অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবছর ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই আমরা বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সচেতন করাসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে আসছি। তবে অতীতের সঙ্গে পরিসংখ্যান তুলনা করে দেখা যাচ্ছে এবছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেকটা কম। আমাদের কার্যকর পদক্ষেপের কারণে এখন পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায়ও আমাদের দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক কম। ডেঙ্গু পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করাই আমাদের লক্ষ্য।'ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রচারাভিযানে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণখানের মধ্য আজমপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়িতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রয়েছে। মেয়র আতিকুল ইসলাম সরেজমিনে এলাকাটি পরিদর্শন করেন। দেখা গেছে এই এলাকায় অনেকগুলো  ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি নির্মাণাধীন ভবনে পানি জমে আছে। একটিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে।

এসময় নির্মাণাধীন একটি ভবনে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুলকার নাইন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন।

নগরবাসীর উদ্দেশ্যে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু সিটি করপোরেশনের পক্ষে পুরোপুরিভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়৷ এক্ষেত্রে জনগণের সহযোগিতা অতি গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের আন্তরিক সহযোগিতায় গত ঈদে মাত্র ১২ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছি। জনগণের সহযোগিতা পেলে আমরা ডেঙ্গুও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো। নিজেদের বাসাবাড়িতে ফুলের টব, অব্যবহৃত টায়ার, ডাবের খোসা, চিপসের খোলা প্যাকেট, বিভিন্ন ধরনের খোলা পাত্র, ছাদ কিংবা অন্য কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।'ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালান ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম

সুস্থতার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, 'সুস্থতার জন্য সুস্থ পরিবেশের কোনও বিকল্প নেই। আর সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম-সংক্রান্ত সামাজিক আন্দোলনে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।'

আজমপুর এলাকায় প্রচারাভিযান শেষে ডিএনসিসি মেয়র নিকুঞ্জ-১ এলাকায় প্রচারাভিযানে অংশ নেন। তিনি আজমপুর ও নিকুঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে জনসাধারণকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন এবং নিজে মাইকিং করে সচেতন করেন। নিকুঞ্জ এলাকায় অভিযানকালে দুটি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। বাড়ি দুটির মালিক বিদেশে অবস্থান করায় খিলক্ষেত থানায় দুটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।

প্রচারাভিযানে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি. জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ উল ইসলাম, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইসহাক মিয়া, ৫০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ডি. এম. শামিম, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর হাছিনা বারী চৌধুরী ও জাকিয়া সুলতানা এবং নিকুঞ্জ-১ কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন- বাড়ছে ডেঙ্গু, রোগীর ঠিকানা ধরে অভিযান চালানোর পরামর্শ