হত্যা মামলায় ২ জনের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন

২০০৪ সালে বগুড়ার শিবগঞ্জে দুই ভাইবোনকে হত্যার দায়ে বিচারিক আদালতে দেওয়া দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করেছেন হাইকোর্ট। আসামিরা হলো- শিবগঞ্জের আটমুল মোঘলপাড়া গ্রামের মফিজ উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে মাহফুজুল হক ও একই গ্রামের মো. আবুল কালাম ওরফে বাদশা।

আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শেষে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন এবং বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে পলাতক দুই আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এসএম শফিকুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।

এর আগে ২৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য শিবগঞ্জের আটমুল মোঘলপাড়া গ্রামের মুসা প্রামাণিকের মেয়ে রহিমা খাতুন (৮) ও ছেলে আবদুর রহিমকে (৬) অপহরণের পরিকল্পনা করে আসামিরা। এরপর ২০০৪ সালের ২ নভেম্বর দুপুরে আসামি মাহফুজুল ওই দুই শিশুকে মাছ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আটমুল মাঠের রজনীকুড়ি ডোবায় ডেকে নিয়ে যায়। শিশুরা সেখানে গেলে আসামিরা তাদের অপহরণের চেষ্টা করে। এ সময় শিশুরা চিৎকার দিলে আসামিরা তাদের গলাটিপে হত্যা করে। এরপর লাশ একটি ধানক্ষেতে ফেলে দেয়।

এদিকে শিশু রহিমা ও রহিম বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা তাদের খোঁজাখুঁজি করে। এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানায় জিডি করা হয়। ঘটনার সাত দিন পর ৯ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে আটমুল মাঠে ধানক্ষেতে দুই ভাইবোনের পঁচন ধরা লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

এ ব্যাপারে তাদের বাবা মুসা প্রামাণিক শিবগঞ্জ থানায় মাহফুজুল এবং তার বাবা মফিজ উদ্দিন, বন্ধু আতাউর ও বাদশার বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ পর্যায়ক্রমে আসামিদের গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে বাদশা ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা শিবগঞ্জ থানার তৎকালীন এসআই হারুন অর রশিদ ২০০৫ সালের ২৮ মার্চ আদালতে চার আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। তবে জামিনে ছাড়া পেয়ে সব আসামি আত্মগোপন করে।

এদিকে মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ  মো. গোলাম ফারুক এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

আদালতের রায়ে, আসামি মফিজ উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে মাহফুজুল হক ও একই গ্রামের মো. আবুল কালাম ওরফে বাদশাকে মৃত্যুদণ্ড এবং আতাউরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে।