বিআইএফসি দখল করেছিল পি কে হালদাররা: মেজর (অব.) মান্নান

বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) অর্থ আত্মসাতের জন্য পিকে হালদার, শাহ আলম ও রহুল আমিনকে দায়ী করে তাদের আইনের আওতায় এনে পাচার ও আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত আনার দাবি জানিয়েছেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান।

বুধবার (২ নভেম্বর) দলীয় কার্যালয়ে মেজর (অব.) মান্নান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ দাবি জানান। তিনি শিগগির বিআইএফসি’র বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম দিয়ে কোম্পানির মূল মালিকদের সমন্বয়ে নতুন বোর্ড গঠনের দাবিও জানান।

মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বিআইএফসি’র নতুন বোর্ড গঠনের পর ৪২টি কোম্পানির কাছে পাওনা ১৬৬ কোটি টাকা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি গত প্রায় ৪৮ বছর যাবৎ অত্যন্ত সুনামের সাথে বাংলাদেশে ব্যবসা করে আসছি। রফতানিমুখী পোশাক শিল্পে আজকে বাংলাদেশের যে অবস্থান এর ভিত রচনায় আমার যে অবদান তা দলমত নির্বিশেষে সর্বমহল স্বীকৃত। ১৯৯৮ সালের ২ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দু’টি কোম্পানি, হংকংভিত্তিক একটি কোম্পানি এবং আমার মালিকানাধীন কিছু দেশীয় প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লি. (বিআইএফসি) নামে লিজিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করি। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি বিদেশি কোম্পানির শেয়ার রয়েছে প্রায় শতকরা পঞ্চাশ ভাগ। আমার মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে প্রায় শতকরা ১৫ ভাগ এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের পাবলিক শেয়ার রয়েছে প্রায় শতকরা ৩৫ ভাগ।

আবদুল মান্নান বলেন, পিকে হালদার বিআইএফসিকে গ্রাস করার জন্য সুকুজা ভেঞ্চার নামে ১টি ভুয়া কোম্পানি তৈরি করে। পুঁজিবাজার থেকে বিআইএফসি শতকরা ৫ ভাগ শেয়ার কিনে জিএম শাহ আলমের সহায়তায় বিআইএফসিতে ২ জন পরিচালক নিয়োগ করেন। এখান থেকেই বিআইএফসি’র পতন শুরু হয়। পিকে হালদারের ২ জন পরিচালক বিআইএফসির বোর্ডে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন এবং পাতানো খেলা অনুযায়ী ৪২টি ঋণের ফাইল বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়ে যান। নিয়ম বহির্ভূতভাবে তাদেরকে বিআইএফসির ৫১৭ কোটি ঋণ দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে আসেন। তবে ৪২টি ফাইল বাংলাদেশ ব্যাংকে আটকা পড়ে, আমরা অভিযুক্ত ঋণের কোনও বিবরণ খুঁজে পেলাম না। আসল ঋণ কত বা কত টাকা ফেরত পেলাম, কিছুরই কোনও হদিস না পেয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান হিসাবে বোর্ডের পক্ষে ঋণের বিতরণকৃত সব টাকা আদায়ের অঙ্গীকার নিয়ে আমি বাংলাদেশ ব্যাংককে তাদের অভিযোগের জবাব দিলাম। পরবর্তীতে আমি ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে ৫১৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে বিআইএফসিতে পিকে হালদারের দোসর রুহুল আমিন বিআইএফসির চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের এনবিএফআই জিএম আলমের ভগ্নিপতি কামরুজ্জামান,  হঠাৎ করে বিআইএফসির হেড অব বিজনেসের পদ দখল করে নেন। বিআইএফসির আমার দীর্ঘদিনের ম্যানেজমেন্টের এমডি থেকে সব সিনিয়র লোকজনদের বাংলাদেশ ব্যাংক এর আদেশে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, পিকে হালদার ও তার দোসররা বিআইএফসির ১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ২০২০ এর ডিসেম্বরে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসে এবং ১ হাজার কোটি টাকা লোকসান দেখায়। পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা বিআইএফসিকে লিকুইডিশনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে। কিন্তু আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে লিকুউডিশন প্রক্রিয়া স্থগিত করি। বাংলাদেশ ব্যাংক বিএফআইসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য আমাকে অনুরোধ করে এবং আমি ৩ বছরের মধ্যে বিআইএফসিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করি। কিন্তু রহস্যজনকভাবে আমার সেই প্রস্তাব বিআইএফসিতে পৌঁছায় এবং পরের দিনই পিকে হালদারের বোর্ড আমার নামে দুদকে অভিযোগ দায়ের করে। এদিকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিআইএফসির একজন বিদেশি শেয়ার হোল্ডারের আবেদনক্রমে হাইকোর্ট পিকে হালদারের বোর্ড বাতিল করে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে চেয়ারম্যান করে ৯ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেন।