বিমানের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় পরিচালক প্রশাসনের কক্ষ থেকে

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে লালবাগ গোয়েন্দা বিভাগের পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর মিন্টু রোডে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ গোয়েন্দা হারুন অর রশিদ।

গত ২১ অক্টোবর আওলাদ হোসেন (২১), জাহাঙ্গীর আলম (৩৬), এনামুল হক (২৮), মো. হারুন-অর-রশিদ (৪০) ও মাহফুজুল আলম (৩১) এই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তদন্ত সাপেকে প্রশপত্র ফাঁস ও জালিয়াতি চক্রের মো. মাসুদ (৩৪), মো. জাহিদ হাসান (২৮), সমাজু ওরফে সোবহান (৩০), মো. জাবেদ হোসেন (২৮) এবং মো. জাকির হোসেনকে (২৯) গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩২টি চেক, ১৭টি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ১৪টি মোবাইল ফোন, ১টি মোটরসাইকেল, ৩টি ডায়েরি, ফাঁস হওয়ার প্রশ্নপত্রের হার্ডকপি ও সফট কপি এবং নিয়োগ প্রার্থীদের প্রবেশপত্র ৫৪টি।

হারুন অর রশিদ বলেন, ‌‘২১ আগস্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের ১২টি পদে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু একটি অসাধু চক্র বিমানের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে ওই নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে নিয়োগ প্রত্যাশী প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ফটোকপি ও সফট কপি বিক্রি করার তথ্যের ভিত্তিতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, ঢাকার লালবাগ বিভাগ অভিযান চালায়।’

তিনি বলেন, ‘বিমানের পরিচালকের (প্রশাসন) অফিস কক্ষের ফটোকপি মেশিনে ফটোকপি করার সময় এমএলএসএস জাহিদ হাসান সম্পূর্ণ প্রশ্ন মোবাইলে ধারণ করে তার সহকর্মী সহযোগী এমএলএসএস সমাজ (ছ) সোবাহান ও অন্যদের সহযোগিতায় নিয়োগ প্রার্থীদের কাছে বিক্রি করে। গ্রেফতার এমটি অপারেটর (ড্রাইভার) জাহাঙ্গীর আলম, এমটি অপারেটর মাহাবুর আলম ও এমটি অপারেটর মাসুদ হোসেন বেশ কয়েক বছর ধরে এই নিয়োগ-বাণিজ্য ও নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত।’

বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ গত ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য নিয়োগ পরীক্ষাটি বাতিল করে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় পাঁচ জনকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রে উচ্চ পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, প্রিন্টিং, সংরক্ষণ, পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানো এবং পরীক্ষা পরিচালনা করার জন্য কমিটি গঠন করে দেয়। কমিটি প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ও যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা করা হয়। কমিটির সদস্যদের গোয়েন্দা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় গত ২৬ অক্টোবর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। মামলাটি গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগে তদন্তাধীন আছে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা বিভাগের এই কর্মকর্তা।