জঙ্গি ছিনতাই: ত্রিশাল থেকে ঢাকার আদালত পাড়া

জঙ্গি ছিনতাই প্রথম হয়েছিল ময়মনসিংহের ত্রিশালে, ২০১৪ সালে। এরপর বিভিন্ন সময় ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাও করেছিল জঙ্গিরা। কিন্তু সফল হয়নি। দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পর আবারও সফল হলো তারা। রবিবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর পুরান ঢাকার আদালত এলাকা থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি— আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ও মাইনুল হাসান শামীমকে ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের সহযোগীরা। ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার পথে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গেটের সামনে চারজন জঙ্গি দায়িত্বরত পুলিশের চোখে স্প্রে করে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।

এই দুই জঙ্গি ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগে আজিজ মার্কেটে জঙ্গিদের হাতে নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন ও ব্লগার অভিজিত রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ডান্ডাবেড়ি ছাড়া দুর্ধর্ষ এসব জঙ্গিকে কিভাবে আদালতে নেওয়া হলো, সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

কয়েকবছর ধরে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে সানি। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহের আদালতে অন্য একটি মামলায় হাজির করতে নিয়ে যাওয়ার পথে  ত্রিশালে ফিল্মি স্টাইলে প্রিজন ভ্যান লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে ও বোমা ফাটিয়ে সালাহউদ্দিনসহ জেএমবির তিন শীর্ষ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয় তাদের অনুসারীরা। অন্য দুই জঙ্গি ছিল— রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ এবং জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান। ওইদিন সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে ও ক্রসফায়ারে নিহত হয় রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ। এ ঘটনায় আতিকুর রহমান নামে পুলিশের একজন কনস্টেবল নিহত হন। আহত হন আরও কয়েকজন।

ত্রিশালের হামলার ঘটনায় জড়িত দুর্ধর্ষ এক জঙ্গি মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন ওরফে রেজাউল করিম ওরফে আবু মুহাজিরকে গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। রিপন গুলশানের হলি আর্টিজানে  হামলা মামলারও চার্জশিটভুক্ত আসামি। হলি আর্টিজান হামলায় অর্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরকের জোগানদাতা রিপন নতুন করে জঙ্গিদের সংগঠিত করতে কাজ করছিল। সহযোগীদের নিয়ে পরিকল্পনা করেছিল— ত্রিশাল স্টাইলে কারাগারে থাকা বন্দি জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার।

রবিবার সকালে পুরান ঢাকার আদালত চত্বর থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ও মাইনুল হাসান শামীমকে ধরিয়ে দিতে পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিট মাঠে নেমেছে। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোসহ সাইবার ইউনিটগুলোও তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে কাজ করছে।

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৪ সালের পর এটা দ্বিতীয় ঘটনা। তারা গুরুত্বের সঙ্গে পলাতক জঙ্গিদের গ্রেফতারে কাজ করছেন।’ র‌্যাবের গোয়েন্দা ইউনিটসহ সব ইউনিট মাঠে নেমেছে তাদের গ্রেফতারে। খুব দ্রুত তাদের গ্রেফতারে তিনি আশাবাদী বলে জানান। র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা ২ হাজার ৭০০ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছিল।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘২০১৬ সালে এই জঙ্গিদের গ্রেফতার করা হয়। তারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। রবিবার আদালত থেকে কোর্ট হাজতে নেওয়ার পথে সহযোগীরা পুলিশকে আহত করে তাদের ছিনিয়ে নেয়। এরপর থেকে সিটিটিসিসহ সারাদেশের পুলিশ তাদের গ্রেফতারে কাজ শুরু করেছে। যারা পালিয়েছে, যারা তাদের ছিনিয়ে নিয়েছে তাদেরও খুব দ্রুত সময়ে গ্রেফতারে পুলিশ সক্ষম হবে।’

হলি আর্টিজানের ঘটনার পর পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) ১৭৩ জনকে ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ৫৫৯ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করে, যাদের অনেকেই জামিনে রয়েছে।

আরও পড়ুন:

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ জঙ্গি ছিনতাই: সারা দেশের আদালতে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ

আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছে সহযোগীরা