X
রবিবার, ০৪ মে ২০২৫
২১ বৈশাখ ১৪৩২

‘রহিম ডাকাত’ থেকে জঙ্গি সংগঠনের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট  
১৭ মে ২০২৪, ১৮:১৪আপডেট : ১৭ মে ২০২৪, ১৮:১৫

গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আব্দুর রহিম (৩২) এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। সংস্থাটি বলছে, এই আব্দুর রহিম ২০১৯ সালের দিকে ‘রহিম ডাকাত’ নামে একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিতো। পরবর্তী সময়ে সেই আলোচিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’র প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী হয়ে ওঠে। এছাড়া আরও কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনকেও সে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছিল বলেও জানিয়েছে সিটিটিসি।

সিটিটিসি জানায়, আব্দুর রহিমকে গ্রেফতারের পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক জব্দ করেছে সিটিটিসি। এসময় একটি বিদেশি পিস্তল, চারটি দেশীয় বন্দুক, দেশীয় বারুদ লোডেড গান তিনটি, দেশীয় তৈরি ওয়ান শুটার গান একটি, দেশীয় তৈরি ধারালো অস্ত্র একটি, গুলি ১৬টি, কার্তুজ ১১টি, শর্টগানের খোসা ২৪টি, বাইনোকুলার দুটি এবং একটি গ্যাস মাস্কসহ বেশকিছু উপকরণ উদ্ধার করা হয়।

সিটিটিসি জানায়, গ্রেফতার আব্দুর রহিম ২০১৯ সালের দিকে ‘রহিম ডাকাত’ গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতো। সম্প্রতি সে জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’-কে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে আসছিল।

শুক্রবার (১৭ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপি কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান। 

গ্রেফতার আব্দুর রহিমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আব্দুর রহিম জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়াকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের জন্য বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির গহীন বনে ড্রামের ভেতরে মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছিল। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি থানাধীন ছাগল খাইয়্যা এলাকার পাহাড়ের ঢালে ঘন জঙ্গলের মধ্যে মাটির নিচে রক্ষিত অবস্থায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গুলিসহ বিষ্ফোরক সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। 

আব্দুর রহিম অন্য একটি সংগঠনকেও অস্ত্র সরবরাহের জন্য অস্ত্র মজুদ করছিল বলে জানান সিটিটিসি প্রধান। আগে একাধিকবার অন্য জঙ্গি সংগঠনকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সরবরাহ করেছিল সে।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে যখন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া'র ট্রেনিং ক্যাম্পের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হলে গ্রেফতার আব্দুর রহিম একাধিকবার জঙ্গি সংগঠনগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে। পরে আরও বেশি অস্ত্র দেওয়ার কথা ছিল। প্রতিশ্রুত অস্ত্রেরই কিছু অংশ সে সংগ্রহ করেছিল। অভিযান শুরুর পর এসব অস্ত্র মাটির নিচে লুকিয়ে রেখে সে সমতলে চলে আসে। সম্প্রতি আমরা গাজীপুরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করি। জিজ্ঞাসাবাদে এসব অস্ত্রের তথ্য জানা যায়। পরে তাকে নিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির গহিন বনে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

জঙ্গি সংগঠনগুলোকে অস্ত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন কেমিক্যাল ও যন্ত্রপাতিও এই আব্দুর রহিমই সরবরাহ করতো বলে জানান সিটিটিসি’র প্রধান। তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে শারক্বিয়ার সদস্যদের ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। এতে বিভিন্ন ধরনে কেমিক্যাল লাগতো। সেই কেমিক্যালও সরবরাহের কথা ছিল। সে জঙ্গি সংগঠনে সরবরাহের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার সংগ্রহ করেছিল।’ তবে সে কীভাবে এটি সংগ্রহ করেছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। 

তিনি বলেন, ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’র মাস্টারমাইন্ড ও সংগঠনের প্রধান শামিন মাহফুজ যখন পাহাড়ে সংগঠনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু করে তখন থেকে আব্দুর রহিম অস্ত্র সংগ্রহের কাজ করছিল। তার সঙ্গে আগে গ্রেফতার হওয়া অস্ত্র সরবরাহকারী মো. কবির আহাম্মদের যোগাযোগ ছিল। এই কবিরই জঙ্গি সংগঠনের জন্য কাজ করতে রহিমকে প্রস্তাব দেয়। সে প্রস্তাবে রাজি হয় এবং অস্ত্র সরবরাহের পাশাপাশি সংগঠনের সদস্য সংগ্রহেও কাজ করছিল।

কীভাবে সে এসব অস্ত্র সংগ্রহ করেছে, তার সঙ্গে আরও অন্য কে জড়িত রয়েছে এবং কোন কোন পর্যায় থেকে সহযোগিতায় পেয়েছে— এসব জানতে গ্রেফতার আব্দুর রহিমকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার (১৭ মে) ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হবে বলেও যোগ করে সিটিটিসি'র প্রধান। 

সিটিটিসির প্রধান বলেন, গত ২৩ জুন (২০২৩ সাল) জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’র মাস্টারমাইন্ড ও সংগঠনের প্রধান শামিন মাহফুজকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পর শারক্বিয়ার প্রশিক্ষণ, অস্ত্রগুলির উৎস, অর্থায়ন সম্পর্কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শামিন মাহফুজকে গ্রেফতার আগে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মো. ইয়াছিন (৪০) এবং বান্দরবান থেকে অস্ত্র সরবরাহকারী মো. কবির আহাম্মদ (৫০) কে ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, কুকি চিনের পাশাপাশি স্থানীয় কবির আহাম্মদ ও আব্দুর রহিম শারক্বিয়ার সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে। সে কক্সবাজার ও বান্দরবান এলাকায় নও-মুসলিমদের নিয়ে কাজ করার আড়ালে "জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া" নামে সংগঠন গড়ে তুলে। নও-মুসলিমদের নিয়ে কাজ করার সময় স্থানীয় অস্ত্র সরবরাহকারী মো. কবির আহাম্মদ ও আব্দুর রহিম কে সে সংগঠনের দাওয়াত দেয়। মো. কবির আহাম্মদ ও আব্দুর রহিম সংগঠনের হয়ে কাজ করতে রাজি হয় এবং অস্ত্র ও গুলি সরবরাহ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। শামিন মাহফুজ ও অস্ত্র সরবরাহকারী কবির গ্রেফতার হলে এবং পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হলে আব্দুর রহিম ও তার সহযোগীরা আত্মগোপনে চলে যায়।

আব্দুর রহিমের দেওয়া তথ্যে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র

পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ক্যাস্পে অংশ নেওয়া কতজন পলাতক রয়েছে? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, প্রশিক্ষণে অংশ নেওয় সবার তালিকা পেয়েছি। তালিকার প্রায় সবাই গ্রেফতার হয়েছে। শুধু তাই নয়, যারা প্রশিক্ষণের দাওয়াত পেয়েছে তাদেরও নাম পেয়েছি। তাদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

পাহাড়ে বড় আতঙ্কের নাম আইইডি, তাহলে কি গ্রেফতার আব্দুর রহিম এসব আইইডির সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে? আপনাদের কাছে কী তথ্য রয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, এ বিষয়ে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তার কাছে যেহেতু কেমিক্যাল পাওয়া গেছে এবং প্রশিক্ষণ ক্যাম্পেও আইইডি প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়েও তথ্য পেয়েছি। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক রয়েছি। সে আর কোথায় কোথায় কেমিক্যাল সরবরাহ করেছে রিমান্ডে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

দেশের বাইরে অন্য কোনও সংগঠনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে কিনা? জানতে চাইলে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দেশে বা দেশের বাইরে তার কোনও নেটওয়ার্ক রয়েছে কিনা তা জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে । 

বর্তমানে 'জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া' সংগঠনের নেতৃত্ব কে দিচ্ছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মনে করি সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো এখন কেউ নেই। এই সংগঠনের সব শীর্ষ নেতাকেই আমরা গ্রেফতার করেছি। নতুন করে সংগঠিত হওয়ার মতো কোনও তথ্যও আমাদের কাছে নেই।

গত মার্চ মাসে আইএসআইএস-এর প্রধান হারিজ ফারুকী ভারতে গ্রেফতার হয়েছিল। তারা বলছেন—সে (হারিজ ফারুকী) বাংলাদেশে ছিল। তাদের সঙ্গে রহিমের কোনও যোগাযোগ রয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি আমি আগেই অস্বীকার করেছি। কারণ আন্তর্জাতিক জঙ্গি বাংলাদেশে অবস্থান করার কোনও সুযোগ নেই। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংঘটের কারও অবস্থানের প্রশ্নই আসে না। 

/এবি/ইউএস/
সম্পর্কিত
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় ২ জন: প্রতিবেদন
পর্নোগ্রাফি প্রচারের অভিযোগে ২ নারী কারাগারে
জবি শিক্ষার্থীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা: প্রেমিক কারাগারে
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (৪ মে, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৪ মে, ২০২৫)
হারের শঙ্কা উড়িয়ে রিয়ালকে সাত পয়েন্ট পেছনে ফেললো বার্সা
হারের শঙ্কা উড়িয়ে রিয়ালকে সাত পয়েন্ট পেছনে ফেললো বার্সা
বিমানবাহিনীর সদস‍্যকে হাতকড়া পরিয়ে মারধর, ২ এএসআই প্রত‍্যাহার
বিমানবাহিনীর সদস‍্যকে হাতকড়া পরিয়ে মারধর, ২ এএসআই প্রত‍্যাহার
রাস্তায় কলেজছাত্রীকে ইভটিজিং, গ্রেফতার ২
রাস্তায় কলেজছাত্রীকে ইভটিজিং, গ্রেফতার ২
সর্বাধিক পঠিত
৩০০ ফিট দিয়ে রামপুরা করিডোর চালুর পরিকল্পনা ডিএনসিসির
৩০০ ফিট দিয়ে রামপুরা করিডোর চালুর পরিকল্পনা ডিএনসিসির
শুকনো মরিচের দাম কেজিতে কমলো ১০০ টাকা
শুকনো মরিচের দাম কেজিতে কমলো ১০০ টাকা
টিএসসিতে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ, সমালোচনার ঝড়
টিএসসিতে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ, সমালোচনার ঝড়
ইঞ্জিন বিকল, মাঝপথে থামলো চলন্ত ট্রেন
ইঞ্জিন বিকল, মাঝপথে থামলো চলন্ত ট্রেন
দর্শক-শ্রোতা প্রতিক্রিয়ায় ‘তীর’বিদ্ধ জেফার!
দর্শক-শ্রোতা প্রতিক্রিয়ায় ‘তীর’বিদ্ধ জেফার!