ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ সবার: প্রধান বিচারপতি

ধর্ম যার যার কিন্তু বাংলাদেশ আমাদের সবার বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত বিজয়া পুনর্মিলনী-২০২২ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ধর্ম মানুষের দৈনন্দিন জীবনে পথ দেখাতে সাহায্য করে এবং আধ্যাত্মিকতার পরিপূর্ণতা দান করে। বাংলাদেশের সংবিধানে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, এ দেশের সকল মানুষের ধর্ম ও নিরাপত্তার অধিকার সমান। তাই যে কোনও ধর্ম অবমাননা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

তিনি বলেন, ধর্মের জন্য সব থেকে বিপজ্জনক হলো অজ্ঞতা। এই অজ্ঞতাই মানুষের সঙ্গে মানুষের বিভেদ তৈরি করে। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ যদি নিজ নিজ ধর্মের ধর্মগ্রন্থ সঠিকভাবে, খোলা মন নিয়ে পাঠ করে, সেই সাথে ধর্মীয় বিধানগুলো পূর্ণ হৃদয়াঙ্গম করে, তাহলে অজ্ঞতার অন্ধকার কেটে যাবে। পাশাপাশি ধর্মীয় বাণী ও ধর্মের শাশ্বত উন্মেষ জাগ্রত থাকবে।

‘ধর্ম যার যার কিন্তু বাংলাদেশ আমাদের সবার। রাষ্ট্র সকলের না হলে নাগরিকরা রাষ্ট্রের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করতে পারবে না, ফলে রাষ্ট্র নাগরিকদের থেকে আনুগত্য আশা করতে পারবে না। আমাদের সংস্কৃতি সকল ধর্মকে ও মানুষকে এক সারিতে আনতে পেরেছে বলে সব ভেদাভেদ ভুলে ভাষার জন্য আন্দোলন করে আমরা জয়ী হয়েছি।’

‘বাংলাদেশের সকলের গৌরবদীপ্ত অহংকার হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। একাত্তরে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রকৃতি কেমন হবে তা চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল এবং সেটা আমাদের সংবিধানে লেখা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী হলেও তাদের সাম্য, মৈত্রী, শান্তি, মানবতা, ভালোবাসা, উদারতা, সহমর্মিতা ও সহযোগিতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এক সাথে বাঁচতে হবে। তাই সকল বিভেদ ভুলে এক সঙ্গে সৌহার্দ্যভাবে এই দেশে আমাদের বসবাস করতে হবে। সব সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অ্যাডভোকেট দীপায়ন চন্দ্র সাহা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউর রহমান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সম্পাদক ও অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ, অ্যাডভোকট বিশ্বজিৎ রায়। আলোচনা শেষে নাট্য অভিনেতা ও শিল্পী ফজলুল রহমান বাবুর পরিবেশনায় গানসহ মনোজ্ঞ সংস্কৃতি আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।