৫ ডিসেম্বরের পর পরিস্থিতি স্পষ্ট হবে

গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়নি মালিক সমিতি, তবে সতর্ক মালিকরা

আগামী ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভাগীয় অন্য শহরগুলোর মতো রাজধানী কেন্দ্রিক আন্তজেলা বা মহানগর ও দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধে সরকার বা মালিক-শ্রমিক সমিতি বা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন—গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে অন্তত দুদিন আগে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হতে পারে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে পরিবহন বন্ধের আনুষ্ঠানিক কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অতীত অভিজ্ঞতায় কোনও কোনও মালিকের মধ্যে ভয় কাজ করতে পারে।

বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে দৃশ্যমান রাজনৈতিক উত্তাপ দেখা দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হলেও নয়া পল্টনেই সমাবেশ করার অনড় অবস্থানের কথা বলে আসছে বিএনপি। এর আগে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলো শান্তিপূর্ণ হলেও সবগুলোয় আগের দিন থেকে গণপরিবহন কার্যত বন্ধ ছিল।

এবারের ঢাকার গণসমাবেশেও আন্তজেলা বা মহানগর ও দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকবে কিনা, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির একাধিক নেতা জানান, কোনও নির্দেশনা না থাকলেও অন্য সমাবেশগুলোর সময়ের মতো এবারও গণপরিবহন বন্ধ থাকতে পারে। তবে সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। ৫ ডিসেম্বরের পরে বোঝা যাবে, ১০ ডিসেম্বর গাড়ি চলবে কিনা।

বিএনপির অন্য বিভাগীয় সমাবেশগুলোর সময়ও গণপরিবহন মালিক সমিতি বা শ্রমিক ফেডারেশন বলেছিল, গাড়ি বন্ধের কোনও সিদ্ধান্ত অথবা কোনও নির্দেশনা নেই। তারপরও সমাবেশগুলোর একদিন আগে গণপরিবহন চলাচল প্রায় বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। একইভাবে ঢাকার সমাবেশের সময়ও আন্তজেলা ও দূরপাল্লার গণপরিবহনগুলো বন্ধ থাকলে রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। তেমনটি ঘটলে নগরবাসী যেমন ভোগান্তিতে পড়বে, তেমনই শহরে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রেও দুর্ভোগে পড়তে হবে যাত্রীদের। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আজমল উদ্দিন আহমেদ (সবুর) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর গণপরিবহন বন্ধের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে কোনও নির্দেশনাও নেই। সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটি আমরা মেনে চলবো। ওই দিন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।’

আজমল উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘তবে অতীতে বিএনপির আন্দোলনের সময় অনেক গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ এখনও অনেক মালিক পাননি। সে কারণে মালিকদের একটা ভয় তো থেকেই যায়।’

বিএনপির ঢাকার বাইরের সমাবেশগুলোর সময় গাড়ি বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে আজমল উদ্দিন বলেন, ‘সেগুলো ছিল এলাকাভিত্তিক পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সিদ্ধান্ত। কেউ কেউ অতি উৎসাহী হয়ে গাড়ি বন্ধ রেখেছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে তখনও কোনও সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা ছিল না পরিবহন বন্ধের। সমাবেশে লোকজনের চাপ তৈরি হয়, সেখানে গাড়ির প্রতি আক্রমণাত্মক হলে, ভাঙচুর করলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। তেমনটি হলে তো গাড়ি বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই। আর তেমনটি না হলে গাড়ি বন্ধ থাকবে না।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে গণপরিবহন বন্ধ থাকার কোনও সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা আমাদের নেই। মালিকরা গাড়ি বন্ধ না রাখলে শ্রমিকরা বন্ধ রাখবে কেন? বরং গাড়ি না চললে শ্রমিকদের উপার্জন বন্ধ থাকে। এতে পরিবহন শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলে সেটা সবার জন্যই ভালো।’

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের ইন্ধনেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বিএনপির সমাবেশের আগে সব ধরনের গাড়ি বন্ধ করে দিচ্ছে। সমাবেশে যাতে লোকসমাগম কম হয়, সে জন্য এই কৌশল নেওয়া হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। তারপরও মানুষের জনস্রোত আটকানো যায়নি।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগও এবার বিএনপির গণসমাবেশের ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয়। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের একাধিক বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়েছে। মোটের ওপর পরিবহন শ্রমিক সংগঠন ও মালিকদের প্রতি ১০ ডিসেম্বর ধর্মঘট না ডাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেউ কোনও বাধা দেয় না। ১০ ডিসেম্বরও বাধা দেওয়া হবে না। কেউ উসকানি দেবেন না।’