জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায় এড়াতে পারে না: র‌্যাব

গত ২০ নভেম্বর ঢাকার একটি আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আনসার আল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের সহযোগীরা। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায় এড়াতে পারে না বলে মনে করছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ কথা বলেন।

পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের আইনের আওতায় আনতে র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কাজ করছে জানিয়ে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পলাতক এই জঙ্গিদের গ্রেফতারে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও র‌্যাবসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাজ করছে।’

তাদের বিষয়ে র‌্যাবের কাছে বেশ কিছু তথ্য আছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘র‌্যাব জঙ্গিদের ক্ষেত্রে প্রথমে যেটা করে থাকে, সেটা হচ্ছে- তাদের পূর্বের অপারাধ কার্যক্রম পর্যালোচনা করে। এই জঙ্গিদের বিষয়ে আমাদের কাছে পূর্বের তথ্য থাকলে পদক্ষেপ নেওয়া অনেকটাই সহজ হতো। এছাড়া তাদের পালিয়ে যাওয়াটা রোধ করতে পারতাম। এর পাশাপাশি আমরা মনে করি, এসব ক্ষেত্রে সবার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না। এখানে কারা কর্তৃপক্ষ ও গোয়েন্দা সংস্থা আছে, সবাই মিলে যদি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়; তাহলে এধরনের ঘটনা রোধ করা যাবে।’

২০১৪ সালে জঙ্গি ছিনতায়ের ঘটনা মনের করিয়ে দিয়ে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সেই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছিলেন। তার অনেকদিন পরে এই ঘটনা ঘটলো। র‌্যাব সব সময় নজরদারির মধ্যে রেখেছে, সব সময় ওটা নিয়ে কাজ করছে।’

ছিনতাই করা জঙ্গিরা দেশে আছে নাকি দেশ ছেড়ে গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরা কাজ করছি। সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তি মাধ্যমে পর্যালোচনা করে, তাদের অবস্থান শনাক্তে কাজ করছি।’

ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গির মধ্যে একজন মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪)। সে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। আর অপর জন আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব (৩৪)। সে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেটশ্বর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।

গত ২০ নভেম্বর সকালে এই দুই আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাদের হাজতখানায় রাখা হয়। হাজতখানা থেকে তাদের সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এরপর ২০১৩ সালের মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি হয়। শুনানি শেষে হাজতখানায় নেওয়ার পথে অজ্ঞাতনামা সাত থেকে আট জন পুলিশের দিকে পিপার স্প্রে ছুড়ে আসামিদের ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আনসার আল ইসলামের এই দুই সদস্য ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলাতে এই দুই জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। একই বছর ৩১ অক্টোবর আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যার মামলাতেও মৃত্যুদণ্ড দণ্ডিত হয়েছে এই দুই জঙ্গি।