আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ে রাজধানীতে উন্মাদনা

খানিকটা উন্মাদনাই ছিল রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে। বাঁধভাঙা উদযাপন আর সম্মিলিত উপভোগের মধ্য দিয়ে এ রাতটি হয়ে উঠেছিল বিশেষ। রাজধানী ঢাকার বুকে অন্য রকম এক ঐকতান; সানন্দা অপেক্ষা হতবিহ্বল কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচের আগ্রাসী মঞ্চায়নের।

এদিন রাত ৯টায় শুরু খেলার ৮০ মিনিটের পর যেন ম্যাচটি এক স্বর্গীয় অনুভূতি সঞ্চার করেছে মহানগরীর অভিবাসীদের মনে। সুদূর কাতারের দোহায় যখন আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের  দ্বৈরথ মধ্যগগনে, তখন ঢাকার বুকে লাখ লাখ মেসি-ভক্তের গগনবিদারী চিৎকার।

উচ্ছ্বাসের উন্মাদনায় সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) মধ্যরাতেও অলিগলিতে স্বশব্দে হেঁটে গেছে টিএসসিতে খেলা দেখা তরুণেরা। এর আগে হয়েছে বিজয়োত্তর মিছিল। বাসাবাড়ি থেকে দলবেঁধে মানুষ নেমে এসেছে সড়কে। মেসিভক্তদের উদযাপন দেখতে।

সব ভয়কে উপেক্ষা করে জয়কে বরণ করে নিতে টুর্নামেন্টের দিন দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে ছিল নানামুখী আয়োজন, খেলার উত্তেজনা বাড়াতে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর আয়োজন হয়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। কোনও জায়গায় ব্যবস্থ করা হয়েছে বিরিয়ানির, কেউ কেউ আবার খাসি জবাই করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোর হলের ছাদে পার্টির আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন শপিংমল, বাড়ির টিভিরুমে সন্ধ্যা হতেই সবার চোখ ছিল টিভির পর্দায়। অপেক্ষার সময় যেন শেষ হয় না আর! সন্ধ্যা হতেই বড় পর্দায় খেলা দেখার জন্য ভক্তরা এসে স্লোগানে স্লোগানে জায়গা দখল করে ঢাবির টিএসসিসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাস এলাকায়।

এরপর রাত ৯টা বাজতেই শুরু হয় খেলা! রেফারির বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে হৃৎকম্পন বাড়তে থাকে ভক্তদের! রাস্তায় গাড়ি কমতে থাকে। সবার চোখ তখন কাতারে, টিভি-মোবাইল-আর বড় পর্দায়। কে হাসবে শেষ হাসি?

২৩ মিনিটে মেসির পেনাল্টি থেকে গোল। উল্লাসে ফেটে পড়ে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। এরপর ৩৬ মিনিটে ডিমারিয়ার গোল। সেই উল্লাস বেড়ে যায় আরও। প্রথমার্ধে যেন এক দুর্দান্ত আর্জেন্টিনাকে দেখা যায়। সমর্থকরা ধরেই নিয়েছেন, আর্জেন্টিনার জয় উদযাপন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

এরপর ম্যাচের ৮০ মিনিটে এমবাপ্পের পেনাল্টি থেকে গোল ও ৮১ মিনিটে সমতাসূচক গোলে যেন পিনপতন নীরবতা ঢেলে দেয় আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মনে। দলটি যখন আর্জেন্টিনা, হাল ছাড়বে কেন? একের পর এক পাল্টা আক্রমণে খেলা এগোতে থাকে। আর ম্যাচজুড়ে বাড়তে থাকে উত্তেজনা।

এরপর অতিরিক্ত সময়ে ১০৮ মিনিটে মেসির গোলে আবারও উল্লাস প্রকাশ করে আর্জেন্টিনা সমর্থকরা। কিন্তু সেই উল্লাসও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ১১৮ মিনিটে আবারও পেনাল্টি থেকে গোল পায় এমবাপ্পে। সময়তায় শেষ হয় মূল খেলা। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।

প্রথম শুট করার সিদ্ধান্ত নেন মেসি। আর্জেন্টিনা জাল খুঁজে পেলেও মার্টিনেজের দুর্দান্তে সেভে ফ্রান্সকে থাকতে হয় এ যাত্রায়। কাঙ্ক্ষিত জয় পায় আর্জেন্টিনা। তাতেই ৩৬ বছর অপেক্ষার প্রহর শেষে শিরোপা স্বাদ পায় আলবিসেলোস্তরা।

জয় নিশ্চিত হতে বাধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়ে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। বের করে আনন্দ মিছিল, ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে আসা দর্শকরা আনন্দ মিছিল নিয়ে গন্তব্য রওনা দেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যান হলে।

এ ছাড়া পান্থপথ, গ্রিনরোড, কারওয়ানবাজার এলাকায় মিছিল। শত শত অনুসারী ভুভুজেলা, ব্যানার নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। রাত সোয়া ১২টার সময় পান্থপথে গাড়ির জট লেগে যায় বিজয়ী দলের অনুসারীদের মিছিলের কারণে। ম্যাচ শেষে আতশবাজি ফোটানো শুরু করে ভক্তরা। আনন্দ মিছিলে স্লোগানে সবার মুখে মুখে মেসিবন্দনা! 

আর্জেন্টিনা ভক্ত মোসাদ্দেক বলেন, এ জয়  ফুটবলের, এ জয় মেসির। অনেক সমালোচনার জবাব এই জয়। এমন ফুটবল ম্যাচ আমি আগে কখনও দেখিনি। আর্জেন্টিনা দুর্দান্ত খেলে ম্যাচ জিতেছে, চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

আরেক আর্জেন্টিনা সমর্থক আতিকুর রহমান রোহান বলেন,প্র থমার্ধেই ভেবেছিলাম আর্জেন্টিনার জয় নিশ্চিত। কিন্তু ৮০ মিনিটের পর ফ্রান্সের কামব্যাক আমাদের দুশ্চিন্তায় পেলে দিয়েছে। এরপর অতিরিক্ত মিনিটে আর্জেন্টিনার গোলের উচ্ছ্বাস কাটতে না কাটতেই আবারও ফ্রান্স পেনাল্টি পেয়ে যায়। শেষ মুহূর্তে মনে হয়ে হার্ট অ্যাটাক হবে। কিন্তু বাজপাখি মার্টিনেজ আমাদের জয় দিয়েছে, অবশেষে আমরা চ্যাম্পিয়। অনেক রাইভালদের আগামী চার বছর কড়া ভাষায় জবাব দেবো।’