বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র দিতে চেয়েছিল নতুন জঙ্গি সংগঠন!

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’র সদস্যদের প্রশিক্ষণে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ধারণা করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকেও সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল এই সংগঠনের। রবিবার (৮ জানুয়ারি) ওই জঙ্গি সংগঠনের অস্ত্র সরবরাহকারী সন্দেহে গ্রেফতার একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তথ্য পেয়েছে সিটিটিসি। বেশ কিছু অস্ত্র ও গুলিও উদ্ধার করা হয়েছে।

সোমবার (৯ জানুয়ারি) বেলা ১টার দিকে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান এই তথ্য জানান। এই কর্মকর্তা জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও রাজধানীর কদমতলী এলাকা থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন– সন্দেহভাজন অস্ত্র সরবরাহকারী কবির আহাম্মদ (৫০), শামীম মাহফুজের সহযোগী ইয়াসিন (৪০) ও আব্দুর রহমান ইমরান। এসময় তাদের কাছ থেকে তিনটি দেশীয় অস্ত্র, ছয়টি একনলা বন্দুক, ১১ রাউন্ড গুলি, সিসা, এসিড, গান পাউডার, অকটেনসহ বিভিন্ন ধরনের দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ উদ্ধার করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি’র কর্মকর্তারা

সিটিটিসি প্রধান জানান, গত ২১ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্রগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার সাইফুল ইসলাম তুহিন ও নাঈম হোসেনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই সংগঠনে অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে কবির আহাম্মদকে শনাক্ত করে সিটিটিসি। পরবর্তীতে সিটিটিসি কবির আহাম্মদকে বান্দরবান জেলা থেকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যাংছড়ি বাইশারী এলাকার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে মাটির নিচে লুকায়িত অবস্থায় দুটি প্লাস্টিকের ড্রাম থেকে অস্ত্র ও গোলাবারূদ উদ্ধার করা হয়।

জঙ্গি সংগঠনের সদস্য সন্দেহে গ্রেফতার তিন জন

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত কবির জানান, তিনি জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন উদ্ধারকৃত অস্ত্রের কিছু অংশ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর কাছ সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার কথিত মাস্টারমাইন্ড পলাতক ও আসামি শামিন মাহফুজ দুর্গম পার্বত্য এলাকায় ওই সংগঠনের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধাপে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রাথমিকভাবে কবিরের বিরুদ্ধে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় অস্ত্র মামলার তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

কবির আহাম্মদের কাছ থেকে তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগরীর কদমতলী থানা এলাকা থেকে একই জঙ্গি সংগঠনের আরও দুই সক্রিয় সদস্য ইয়াসিন ও আব্দুর রহমান ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়। তারা দুইজনই শামিন মাহফুজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। গ্রেফতার আব্দুর রহমান ইমরানের মাধ্যমে শামিন মাহফুজ বিভিন্ন সময় তার সাংগঠনিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করতো। এছাড়া গ্রেফতার ইয়াসিন বিভিন্ন সময় শামিন মাহফুজ ও কথিত হিজরতকারীদের জন্য শেল্টার হাউজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন।

মাটি খুঁড়ে বের করা হয় অস্ত্র ও জঙ্গি সংগঠনের ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জাম

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কবীর আহাম্মদ আগে অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করলেও এখন তিনিও জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সক্রিয় সদস্য। তিনি অস্ত্র সরবরাহের জন্য এই জঙ্গি সংগঠনের কাছ থেকে টাকাও নিতেন।

এখন পর্যন্ত কতজন সদস্য এই জঙ্গি সংগঠনে আছে–জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমরা এখনও কথিত হিজরতকারীদের নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া এই সংগঠনের কত সদস্য আছে তা বলা যাচ্ছে না।

মাটি খুঁড়ে বের করা হয় অস্ত্র ও জঙ্গি সংগঠনের ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জাম

গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর ডেমরা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা হয়েছে। তাদের আজ সোমবারই আদালতে তুলে রিমান্ড আবেদন করা হবে। রিমান্ডে এনে এবিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হবে।