চুরি করা আইফোন অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি

রিজওয়ানুর আহম্মেদ শরীফ বাসে উঠে টার্গেট করে যাত্রীদের পাশে বসে। আইনফোন ছাড়া চুরি করে না সে। যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে উঠে সায়দাবাদ পর্যন্ত এক কিলোমিটার পথে মোবাইল ফোন চুরি করে আবার সে বাস থেকে নেমে যায়। ওই পথে বাসে যাত্রীর চাপ কম থাকায় তার জন্য বড় সুযোগ। এছাড়া অন্যদের কাছ থেকেও চুরি করা আইফোন কেনে রিজওয়ানুর। পরে চুরি করা আইনফোন অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে বেশি দামে বিক্রি করে সে। চোরাই ফোনসহ গ্রেফতার হওয়া রিজওয়ানুর পুলিশকে এ তথ্য জানিয়েছে।  

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. তৌকির। আমেরিকা থেকে বড় ভাইয়ের পাঠানো শখের আইফোন হারানোর কথা ভুলতে পারছিলেন না তিনি।  ভয়ে পরিবারের কাছেও মোবাইল চুরি হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেননি। ২৮ ডিসেম্বর ব্যক্তিগত কাজে পল্লবী থেকে যাত্রাবাড়ী গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে ফেরার পথে পাশের আসনে বসা ব্যক্তিই তার  ফোনটি চুরি করেন। ওই সময় তার (চোর) পিছুও নিয়েছিলেন তৌকির, কিন্তু চোরকে ধরতে পারেননি। পরে  যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন তিনি।

বুধবার ‍(১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানান তৌকির। তিনি বলেন, ‘‘ওই দিন বিকালে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে ‘শিকর’ বাসে উঠি। বাস সায়দাবাদ জনপথের মোড় পৌঁছালে দীর্ঘ সময় ট্রাফিক জ্যাম আটকে থাকায় বাসের মধ্যে ঘুম চলে আসে। পরে বাস চলা শুরু করলে ঘুম ভেঙে যায়। মায়ের কাছে ফোন দেওয়ার জন্য পকেটে হাত দিয়ে দেখি, ফোন নেই। পাশের লোকটাও নেই। আশপাশের মানুষ জানায়, ওই লোকটি বাস থেকে নেমে গেছে।’

ভুক্তভোগীর ভাষ্য, আমিও বাস থেকে নেমে দেখি— সেই লোক পালিয়ে যাচ্ছে। পিছু নিয়ে কিছু পথ গেলেও তার আর খোঁজ পাইনি। পরে মন খারাপ হয়ে যায় এবং থানায় গিয়ে মামলা করি। অবশেষে  মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) ফোনটা ফিরিয়ে দেয় যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ। কিন্তু এখনও ওই ডিপ্রেশন  থেকে বের হতে পারিনি। কীভাবে আমার পকেট থেকে বাসভর্তি মানুষের মাঝে ফোনটা বের করে নিলো, ভাবা যায়!’

ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী ডেমরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মধুসূদন দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় গত ২৮ ডিসেম্বর মোবাইল চুরির ঘটনায় একটি মামলা হয়। ওই ঘটনার তদন্ত নেমে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় বুধবার ভোরে সায়েদাবাদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত রিজওয়ানুর আহম্মেদ শরীফকে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে ১০টি চোরাই আইফোন উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে  মামলার বাদী তৌকিরের চুরি হওয়া আইফোনটিও পাওয়া গেছে।’

এসি মধুসূদন দাস বলেন, ‘রিজওয়ানুর আইফোন ছাড়া চুরি করে না। আর চুরি করা মোবাইল ফোন সে খোলা বাজার ও পরিচিতদের কাছেও বিক্রি করতো না। সে অনলাইনে  চোরাই মোবাইল ফোন বিক্রি করে আসছিল। রিজওয়ানুরের বাসা যাত্রাবাড়ী এলাকায় হওয়ায় সে যাত্রাবাড়ী-সায়দাবাদ বাস স্টান্ড এলাকায় মোবাইল ফোন চুরি করে আসছিল।’

পুলিশ জানায়, আসামি রিজওয়ানুর আট বছর ধরে বিভিন্ন ব্রান্ডের দামি মোবাইল ফোন নিজে চুরি করে সেই ফোন অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করতো, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য সে স্বীকার করেছে।