আলোর ঝলকানিতে মুখর সাকরাইন উৎসব

দিনভর ঘুড়ি উড়ানো শেষে  বর্ণিল আলোক ঝলকানির মধ্য দিয়ে নাচে গানে উৎসবমুখর পরিবেশে সাকরাইন পালন করছে পুরান ঢাকাবাসী। বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে পৌষ মাসের বিদায়ের দিন সাকরাইন পালন করেন তারা।IMG-20230114-WA0029

শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল থেকেই কুয়াশা উপেক্ষা করে পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজার, রায়সাহেব বাজার, বংশাল, সূত্রাপুর, বাংলাবাজার, সদরঘাট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শুরু হয় সাকরাইনের ঐতিহ্য ঘুড়িখেলা। আকাশে দখল নিতে থাকে পানদার, চোখদার, বলদার, দাবাদার, পতঙ্গ এবং লেজওয়ালা ঘুড়ি। সেই সাথে চলে নিজের ঘুড়িকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠানোর প্রতিযোগিতা। সময় গড়িয়ে দুপুর হতেই বিভিন্ন রং ও আকৃতির ঘুড়িতে ঢেকে যায় পুরান ঢাকার আকাশ, চলে ঘুড়িতে ঘুড়িতে কাটাকাটি খেলা। শিশু, তরুণ, বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষ হৈ-হুল্লোড়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেন ঘুড়ি উড়ানোর মধ্য দিয়ে। ঘরে ঘরে আয়োজন করা হয় পিঠাপুলির।IMG-20230114-WA0018

শাঁখারিবাজারের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব নারায়ণ রায় বলেন, 'ছোটো থেকেই সাকরাইনে আমরা ঘুড়ি উড়াই। এখন তো অনেক আধুনিক হয়ে গেছে, গান-বাজনা, আলো, আতশবাজি কতকিছু। তবে আগের দিনের ঘুড়ি উড়ানো বাদ পড়েনি এটাই ভালো কথা। আমরা ছোটো বয়সে সকালে বাড়ির ছাদ থেকে ঘুড়ি তুলতাম, খাওয়া-দাওয়া হুঁশ থাকতো না, এই ঘুড়ি কাটাকাটি, হৈ-হুল্লোড় চলতো। এখন বাড়ির ছোটোদের নিয়ে ঘুড়ি উড়াই, আগের মতো আবেগ কাজ করে না, কিন্তু আনন্দ লাগে।'IMG-20230114-WA0023

দিনে যে উৎসব ছিল ঘুড়ি ওড়ানোর রাতে তা পরিণত হয়েছে আলোর খেলায়। দিনভর ঘুড়ি উড়ানো শেষে সন্ধ্যা থেকে পুরান ঢাকা রূপ নেয় আলোর উৎসবে। প্রায় প্রতিটা বাড়ির ছাদ থেকে লেজার রশ্মি আর আতশবাজির আলোর ঝলকানিতে বর্ণিল হয়ে উঠে পুরান ঢাকার আকাশ। তবে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবার ফানুস উড়তে দেখা যায়নি।IMG-20230114-WA0033

ডিজে পার্টি আর লেজার রশ্মির খেলায়  ডিস্কোতে পরিণত হয় এক একটা বাড়ির ছাদ। কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী এমনকি বয়োবৃদ্ধরাও উচ্চশব্দে গানের সাথে কোমর দুলিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন। মুখে কেরোসিন নিয়ে আগুন খেলাও খেলেছেন অনেকে।IMG-20230114-WA0037

সন্ধ্যায় হেমচন্দ্র লেনের একটি বাড়ির ছাদে গিয়ে দেখা যায়, ডিজে গানের তালে তালে নাচছেন ৩০-৩৫ জন। যাদের অধিকাংশর বয়সই ২০-৩০ এর মধ্যে। তাদের একজন কাওসার বলেন, 'সারাদিন ঘুড়ি উড়িয়েছি। এখন ডিজে পার্টি, বাড়ির লোকজন ছাড়াও বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশীরা এসেছে। সারাবছর আমরা সাকরাইনের অপেক্ষায় থাকি। সবাই মিলে আনন্দ করছি।'IMG-20230114-WA0035

ছবি: মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ