আজই মুক্তির আশা আইনজীবীর

মুফতি ইব্রাহিমের দুই মামলার প্রডাকশন ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার

উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিমের দুই মামলায় প্রডাকশন ওয়ারেন্ট (পিডব্লিউ) প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। ফলে তার মুক্তিতে আর বাধা থাকছে না তার।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার আইনজীবী মোহাম্মদপুর ও শেরেবাংলা নগর থানার পৃথক দুটি মামলায় পিডব্লিউ প্রত্যাহারের আবেদন করেন।

শুনানি শেষে শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম ও মোহাম্মদপুর থানার মামলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ সিদ্দিকী এ আবেদন মঞ্জুর করেন। 
এই দুই মামলায় মুফতি কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম জামিনে ছিলেন। কারাগারে আটক থাকায় এই মামলায় পিডব্লিউ ছিল।

এদিকে সোমবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ কে এম জুলফিকারের আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দোষ স্বীকার করেন মুফতি কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম। দোষ স্বীকার করে ক্ষমাপ্রার্থনা করায় গ্রেফতারের পর থেকে এ পর্যন্ত যে কারাভোগ করেছেন, তা সাজা হিসেবে নেন আদালত।

কাজী ইব্রাহিমের আইনজীবী শওকত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, মুফতি কাজী ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। তিনি আজ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দোষ স্বীকার করায় আদালত তাকে গ্রেফতারের পর থেকে এ পর্যন্ত যত দিন কারাভোগ করেছেন, তা সাজা হিসেবে গণ্য করেছেন। সে হিসাবে তার এক বছর তিন মাস ১৯ দিনের কারাভোগের সাজা হয়। এ ছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় প্রতারণা ও শেরেবাংলা নগর থানায় মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকী হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ দুই মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। এ দুই মামলায় প্রডাকশন ওয়ারেন্ট (পিডব্লিউ) প্রত্যাহারের আবেদন আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আমরা আশা করছি আজই তিনি কারামুক্ত হবেন।

এরপর ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর লালমাটিয়ার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। হিসাব করলে দেখা যায়, গ্রেফতারের পর থেকে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তার এক বছর তিন মাস ১৯ দিনের কারাবাস হয়, যা দণ্ড হিসেবে নেন আদালত।

ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, কাজী ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৫/৩১/৩৫ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ ধারাগুলোর সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। যেহেতু তিনি দোষ স্বীকার করেছেন, সেহেতু বিচারক সন্তুষ্ট হয়ে তার কারাভোগটাই সাজা হিসেবে নিয়েছেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, কাজী ইব্রাহিম তার বিভিন্ন ওয়াজ, মাহফিল ও খুতবার সময় মিথ্যা-উসকানিমূলক ও ভীতি প্রদর্শন সংবলিত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করেন। প্রচারিত ভিডিও সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদকালে তিনি এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে উসকানিমূলক ভিডিওগুলোতে প্রচারিত বক্তব্য তার নিজের বলে স্বীকার করেন।

তিনি ফেসবুক-ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা, আক্রমণাত্মক ও ভীতি প্রদর্শনমূলক বিভিন্ন ভিডিও প্রচার এবং প্রকাশ করে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৫/৩১/৩৫ ধারায় অপরাধ করেছেন বলে মামলার অভিযোগে বলা হয়।

এরপর যখন তাকে গ্রেফতার করতে লালমাটিয়ার বাসায় যায় পুলিশ, তখন তিনি ফেসবুক লাইভে এসে ‘হিন্দুস্তানি দালাল ও র’র এজেন্ট তার বাসা ঘিরে রেখেছে বলে মন্তব্য করেন। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলাটি করেছিলেন ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মুন্সি আব্দুল লোকমান।

এ মামলায় তাকে আদালতে হাজির করে দুদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। রিমান্ড শেষে একই বছরের ২ অক্টোবর জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তদন্ত শেষে ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মো. হাসানুজ্জামান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।