রুমকির ‘সেলফ অ্যান্ড আদার্স’ শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন

সময়ের গুণী শিল্পী হাসুরা আক্তার রুমকির ‘সেলফ অ্যান্ড আদার্স’ শীর্ষক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে। শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, রিকশা বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাহনটি একজন মানুষের পরিবার এবং আমাদের বহন করে চলেছে। আমরা শিল্পী, সাহিত্যিক, কবিরা যদি এটিকে ভুলে যাই, তা হবে আমাদের জন্য একটা অন্ধত্বের মতো।

নারীদের অগ্রযাত্রা নিয়ে শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, নারীদের ছাড়া বাংলাদেশ কখনও এগোবে না। কিন্তু দেশে এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে, যেখানে নারীদের দাবিয়ে রাখতে নানা ষড়যন্ত্র করা হয়। এগুলো কাটিয়ে ওঠা একজন নারীর পক্ষে খুবই কঠিন কাজ। বিশেষ করে কোনও নারী যখন এগুলো কাটিয়ে ওঠেন, তখন তার মাথার ওপর অনেক হাত থাকে।

বাংলাদেশের রিকশার ডিজাইনের মতো বিশ্বের কোনও দেশে এত সুন্দর ডিজাইন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যাক না কেন, শত বছর পরও এই রিকশাই আমাদের সংস্কৃতির একটা অংশ হবে, এটি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।

হাসুরার আঁকা ছবির নানা দিক উল্লেখ করে শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, একজন নারী হয়েও সে খুবই ভালো ছবি আঁকছে। তার রঙের বিষয়টি খুবই চমৎকার। একজন শিল্পীর জন্য কম্পোজিশন, চিন্তাধারা সবকিছুই প্রয়োজন। এগুলো রুমকির শিল্পকর্মে জোরালোভাবে ফুটে উঠেছে। আমি তার জন্য অনেক শুভ কামনা রাখছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সাবেক অধ্যাপক ও চিত্রশিল্পী জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের চোখের সামনে থাকা রিকশাও যে কত সুন্দর চিত্রকর্ম হতে পারে, তা আমরা চিন্তা করতে পারিনি। সেটি রুমকি করে দেখিয়েছে। তার শিল্পকর্মে রিকশার বহু দিক ফুটে উঠেছে। রুমকির একাডেমির দক্ষতার পাশাপাশি একজন শিল্পীর সব গুণাবলি রয়েছে। সে একদিন খুবই ভালো করবে, সেই প্রত্যাশা করাই যায়।

অভিনেত্রী শমী কায়সার বলেন, একজন নারী যখন চিত্রকলায় পদচারণ শুরু করে, তার যুদ্ধ ও সংগ্রামটা অনেক বড় হয়। পরিবারের ইচ্ছা অনুয়ায়ী চিকিৎসক না হয়ে একজন নারী শিল্পীর জীবনটা যাপন করার যে স্বপ্ন ও চ্যালেঞ্জ রুমকি নিয়েছে, সেটিকে একটা সাহসী পদক্ষেপ। নারীরা এই ধরনের কাজে এগোতে গেলে নানা বাধা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। সেগুলো ডিঙিয়েই এই পর্যায়ে পৌঁছেছে রুমকি। তার চিত্রকর্মে রিকশার যে বহুমাত্রিক উপস্থাপন, তা প্রশংসনীয়।

হাসুরা আক্তার রুমকি বলেন, ছোটবেলা থেকেই চিত্রকর্মের প্রতি একটা ঝোঁক ছিল। সেখান থেকে এক পর্যায়ে চারুকলায় ভর্তি হওয়া এবং পরে চিত্রকর্মকে জীবনের অংশ করে নেওয়া। এবারের প্রদর্শনীটা রিকশা নিয়ে করছি, যেটি সব শ্রেণি-পেশা ও সব বয়সের মানুষের একটি সাধারণ বাহন।

তিনি আরও বলেন, সমাজে একজন নারী চিত্রশিল্পী হিসেবে আমি আশা করবো সবাই যেন আর্টিস্টকে এবং আর্টকে সাপোর্ট করেন। সমাজের কাছে এইটুকু চাওয়া শিল্পীকে আপনারা প্রেরণা দেবেন। আগামীতে আরও ভালো কাজ উপহার দিতে চাই।

চিত্রকর্মটি দেখতে বিভিন্ন অঙ্গনের শিল্পী, সাহিত্যক, সংস্কৃতি কর্মী ও সংস্কৃতিপ্রেমীরা ভিড় জমিয়েছেন। আজ থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি আগামী ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই প্রদর্শনী।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ওরিয়েন্টাল আর্ট বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন হাসুরা আক্তার রুমকি। ২০২১ সালে জাপানের কাহাল আর্ট গ্যালারিতে হওয়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনীতে গ্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া কয়েকটি গ্রুপ আর্ট প্রদর্শনী, কর্মশালা, আর্টক্যাম্প, প্রকল্প ও আর্ট রেসিডেন্সিতে অংশ নিয়েছেন হাসুরা।