'ঘুম: জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ'

ঘুম হল দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ঘুমের সময় সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া স্তিমিত থাকে। ঘুম শরীরকে চাঙ্গা করে পরবর্তী দিনের কাজের জন্য আমাদের তৈরি করে। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিকঠাক রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের কোনও বিকল্প নেই।

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আবদুস সালাম হলে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক 'ঘুম: জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ' শীর্ষক এক সেমিনারে ঘুমের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ মনিলাল আইচ লিটু এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইতিহাস সংরক্ষণ প্রকল্প।

ডাঃ মনিলাল আইচ লিটু বলেন, 'সঠিক ঘুমের অভাবে আমাদের অনেক বিপত্তি ঘটে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, হার্ট এটাক, সড়ক দুর্ঘটনা, মানসিক রোগ সমূহ অনেক সময় বিবাহ বিচ্ছেদ, হার্টের নানারকম রোগ এগুলো মোটাদাগে ঘুমের সমস্যা ও নাক ডাকার ফসল। কাজেই আমাদের পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন।'

বয়স অনুযায়ী মানুষের ঘুমের প্রয়োজনীয় সময় ভিন্ন হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের পরামর্শপত্র অনুযায়ী ৬ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুদের রাতে অন্তত ৯-১১ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৮-১০ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মানুষের রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ৬৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সীদের জন্য ঘুমানো প্রয়োজন ৭-৮ ঘণ্টা। অনেকেই এর চেয়ে কম ঘুমিয়েও সুস্থ থাকতে পারেন, ঘুম কম হলে দেখা দিতে পারে নানা জটিলতার।

1

ঘুম কম হলে নতুন স্মৃতি তৈরি হয়ার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলেন, ঘুম কম হলে মস্তিষ্কে ‘বিটা অ্যামিলয়েড' নামের ক্ষতিকর প্রোটিন তৈরি হয়। অ্যালজাইমার রোগের সঙ্গে এই প্রোটিনটির সম্পর্ক রয়েছে। আমরা যখন ঘুমাই, তখন আমাদের শরীর মস্তিষ্ক থেকে বিটা অ্যামিনয়েড ও এরকম অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণ করে থাকে। কাজেই ঘুম কম হলে আলজাইমার রোগ সৃষ্টিকারী এই প্রোটিনটি ও এরকম ক্ষতিকর পদার্থগুলো মস্তিষ্কে জমা হবে। আর যত দিন যাবে, ডিমেনশিয়া তৈরি হবে।

শরীরের ওপর ঘুম কম হওয়ার নানারকম প্রভাব রয়েছে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘ঘুম কম হওয়ার ফলে প্রজননতন্ত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এছাড়া কম ঘুম একজনের শারীরিক বয়সকে তার প্রকৃত বয়সের চেয়ে ১০ বছর বাড়িয়ে দেয়। কম ঘুমের প্রভাব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপরও পড়ে। মাত্র এক রাত চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ঘুমালে শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধী কোষগুলোর ৭০ শতাংশ মরে যায়। এভাবেই কম ঘুম তৈরি করে অস্ত্রের ক্যান্সার, প্রোস্টেটের ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের মতো নানা ধরনের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’

এসময় ডা. মনিলাল দৈনন্দিন কাজের সময় ঠিক রেখে দিনে ঘুম পরিহার করার আহ্বান জানান।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক টি এ চৌধুরী অধ্যাপক কামরুল হাসান খান, জাতীয় অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ এবং জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান প্রমুখ।