মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে আত্মগোপনে ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি

১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয় আব্দুল মজিদের (৮০) বিরুদ্ধে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পায় সে।

২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে চলমান মামলার শুনানিতে হাজিরা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এর পরপরই আব্দুল মজিদ নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে। রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকে। তারপর এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় মাদারীপুরে গিয়ে একটি কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে পলাতক জীবন শুরু করে।

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে র‌্যাব-৩-এর একটি আভিযানিক দল মাদারীপুর সদর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) র‌্যাব ৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ রাজধানীর কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

র‌্যাব-৩-এর সংবাদ সম্মেলন

তিনি বলেন,  ১৯৭০ সালে গঠিত জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত তালিকায় আসামি মজিদ পূর্বধলা থানা জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী এবং পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর হিসেবে গঠিত রাজাকার বাহিনীর অত্যাচারে বাংলাদেশের আপামর জনতার ওপর চলে অমানবিক ও পৈশাচিক নির্যাতন। ১৯৭১ সালে ২১ আগস্ট দুপুরে আব্দুল মজিদ তার দলবল নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেকের বাড়িতে আক্রমণ করে। সে সময় বাড়িতে অবস্থানরত আব্দুল খালেকসহ মুক্তিবাহিনীর সবাইকে এক এক করে আসামি ও তার সহযোগিরা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের লাশ পাশের কংস নদীতে ফেলে দেয়। অপরাপর মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ কোকখালী নদীতে বস্তাবন্দি করে ফেলে দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডর পাশাপাশি তারা আব্দুল খালেকের বাড়িতে লুটপাট চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় মৃত আব্দুল খালেকের ভাই আব্দুল কাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে কোনও রকমে প্রাণ বাঁচায়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আব্দুল মজিদসহ চার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন আব্দুল কাদের। পরে মামলার তদন্তে আরও তিন জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত সাতটি অভিযোগই প্রমাণিত হলে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সাত জন আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। এটি যুদ্ধাপরাধের মামলায় ৩৬তম রায়। বিচার চলাকালে এই মামলার দুই জন আসামি (আহম্মদ আলী ও আব্দুর রহমান) মারা যায়। রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় মারা যায় আরও দুই আসামি (রদ্দিন মিয়া ও আব্দুস সালাম বেগ)। মামলার আরও দুই আসামি (আব্দুল খালেক তালুকদার ও কবির খাঁ) বর্তমানে পলাতক।

এ দিকে মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান থাকাকালীন সময়ে ২০১৫ সালে আব্দুল মজিদ তার নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে এবং ফকিরাপুল এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকে। এরপর মাদারীপুরে গিয়ে আত্মগোপন মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে পলাতক জীবন শুরু করে। ২০১৫ সাল থেকে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালীন সমেয় সে কখনই আদালতে হাজিরা দেয়নি।

আরিফ মহিউদ্দিন আরও জানান, গ্রেফতার এড়াতে সে নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতো। এ সময় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ড দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো।