অমর একুশে বইমেলা

দাম বাড়লেও মেলায় বই কিনছেন পাঠকরা

এবার বইমেলা শুরুর বহু আগেই বাড়তে থাকে প্রকাশনা শিল্পের প্রাথমিক কাঁচামাল কাগজের দাম। কাগজের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ায় সংগত কারণে বইয়ের দামও বেড়েছে। যে কারণে প্রকাশকদের মাঝে শঙ্কা ছিল বই বিক্রি নিয়ে। তবে মেলা শুরুর পর দেখা যাচ্ছে দাম বাড়লেও পাঠক বই কিনছেন। তাতে আশা দেখছেন প্রকাশকরা।

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মেলার চতুর্থ দিন বিকালে আগের দিনের তুলনায় পাঠক-দর্শনার্থী সমাগম কম দেখা গেলেও আগতদের অধিকাংশের হাতে দেখা গেছে বই।

মেলা স্টল-প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মীরা জানান, মেলায় আগতদের মাঝে বই কেনার আগ্রহ আছে বেশ। বইয়ের দাম বাড়ার কারণে কিছুটা পাঠক আগ্রহ কমলেও বই কিনছেন তারা। মেলার শুরুর দিকে যে বিক্রি হচ্ছে, তাতে বলা যায়, সামনে যত সময় গড়াবে, তত বই বিক্রি বাড়বে। প্রকাশকরা হতাশ হবেন না বলে তাদের বিশ্বাস।

বাতিঘরের বিক্রয়কর্মী সাইফুল ইসলাম হৃদয় বলেন, ‘কাগজের দাম বাড়ায় বইয়ের দামও বেড়েছে। সে কারণে পাঠকের আগ্রহ একটু কম মনে হচ্ছে। তবে প্রথম দিক হিসেবে পাঠক বই কিনছেন। আশা করছি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবার আগ্রহ বাড়বে, বিক্রিও বাড়বে।’

অনন্যা প্রকাশনীর বিক্রিয়কর্মী ইমরান বলেন, ‘এখন তো মেলার শুরুর দিক, সে হিসাবে বিক্রি ভালোই হচ্ছে। বইয়ের দাম বাড়লেও পাঠকের বই কেনাতে কোনও প্রভাব পেলছে বলে আমার মনে হয় না। তারা বই কিনছে, সামনে আরও বাড়বে। বিক্রি বাড়বে, পাঠকদের হতাশ হতে হবে না আশা করছি।’

অন্য প্রকাশের বিক্রিয়কর্মী সাদিয়া নাজনীন বলেন, ‘বইয়ের দাম বৃদ্ধি পাঠকের বই কেনার ওপর প্রভাব পড়ছে বলে আমার মনে হয় না। তারা আসছেন, বই কিনছেন। সামনে বিক্রি আরও বাড়বে।’

মেলাকে কেন্দ্র করে বেরিয়েছে ‘সাড়ে তিন দিনের পত্রিকা’
অমর একুশে বইমেলা-২০২৩-কে কেন্দ্র করে বের করা হয়েছে ‘সাড়ে তিন দিনের পত্রিকা’ সাহিত্য পত্রিকা। মেলাজুড়ে আটটি সংখ্যা বের হবে। একেকটি সংখ্যায় একেকজন অতিথি সম্পাদক থাকবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাড়ে তিন দিনের পত্রিকা

 

এ ছাড়া প্রকাশক হিসেবে আছেন মাহমুদুল হাসান, সম্পাদন পর্ষদে আছেন স্বরলিপি, জাকির উসমান, রাশেদ আহমেদ, মুজাহিদ বিল্লাহ।

শিল্প নির্দেশক কাজী যুবাইর মাহমুদ বলেন, আমরা মেলায় আটটি পত্রিকা বের করবো। একেকটি সংখ্যায় একেকজন অতিথি সম্পাদক থাকবেন। এতে দেশের শিল্প-সাহিত্যের বিশিষ্টজনরা সম্পাদনা করবেন।

‘মিডিয়া সেন্টার’-এর নেই ব্যবহার
অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এ প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশেও রয়েছে একটি মিডিয়া সেন্টার। তবে এগুলোর নেই কোনও ব্যবহার। মেলায় সংবাদ সংগ্রহের জন্য আসা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিডিয়া সেন্টারগুলো ঠিক জায়গায় বসানো হয়নি। ফলে গণমাধ্যমগুলো সেগুলো ব্যবহার না করে নিজেদের মতো স্টল বানিয়ে তাদের প্রচার কাজ চালাচ্ছে।

মেলায় আসা দৈনিক সমকালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি যোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘মেলা বাংলা একাডেমিতেও হলেও মানুষ মেলা বলতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেকেই বোঝে। স্বাভাবিক কারণেই মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসে বেশি। মিডিয়াগুলোও তাদের প্রচারের সুবিধার্থে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হয়। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে জায়গায় মিডিয়া সেন্টার দেওয়া হয়েছে, সেখানে মানুষ যায় না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জাতীয় দৈনিকের সিনিয়র রিপোর্টার বলেন, আসলে মিডিয়া সেন্টারগুলো মিডিয়ার প্রচারের সুবিধার জন্য দেওয়া হয়েছে কিন্তু যে জায়গায় দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে মিডিয়াগুলোর সুবিধা পাওয়া দুষ্কর। তাই তারা নিজের মতো করে স্টল নির্মাণ করে প্রচারকাজ চালাচ্ছেন। আমার মনে হয় মিডিয়াগুলোর সঙ্গে আলাপ করে জায়গায় নির্ধারণ করলে ভালো হতো।

মেলার নিয়মিত আয়োজন
অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৩-এর চতুর্থ দিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ ড. আকবর আলি খান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ফারুক মঈনউদ্দীন, মো. মোফাকখারুল ইকবাল এবং কামরুল হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ সাদিক।

প্রাবন্ধিক বলেন, ড. আকবর আলি খান প্রশাসনের বহু পদে সাফল্যের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। মুজিবনগর সরকারে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছিলেন পাকিস্তান সরকার তার বিরুদ্ধে জেলও ঘোষণা করেছিল। বহুকাল তিনি অর্থসচিব হিসেবে কাজ করেছেন, সরকারি প্রশাসনের শীর্ষ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন, বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ছিলেন, তত্ত্ববধায়ক সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টাও ছিলেন। সরকারি প্রশাসনিক কর্মে এসব চাপ সত্ত্বেও আকবর আলি খানের মূল পরিচয় তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখাজোখায় ছড়িয়ে আছে। পণ্ডিত হিসেবে তিনি অত্যন্ত উচ্চমানের সৃষ্টি রেখে গেছেন।

মোহাম্মদ সাদিক বলেন, অর্থনীতি, ইতিহাস নৃবিজ্ঞান ও সাহিত্য নিয়ে গভীর জ্ঞানতাত্ত্বিক আলোচনা ড. আকবর আলি খানকে যেমন অমর করেছে, তেমনি বাঙালি জাতিকে করেছে বন্ধ। এমন একজন বিবেকবান, স্পষ্টভাষী, সং ও নির্মোহ মানুষ আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য নিঃসন্দেহে অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবেন।

আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ফারুক হোসেন, আবদুল বাছির, ইসহাক খান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি অসীম সাহা, অরুনা সাহা এবং ফরিদ কবির। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মো. রফিকুল ইসলাম, অলোক কুমার বসু এবং মিজানুর রহমান সজল।

মেলায় নতুন বই 
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মেলায় নতুন বই এসেছে ১১৩টি। এর মধ্যে গল্প ৪, উপন্যাস ২৪টি, প্রবন্ধ ৬টি, কবিতা ১৮, ছড়া ৩, শিশু সাহিত্য ১, জীবনী ১০, রচনাবলি ২, মুক্তিযুদ্ধ ১, বিজ্ঞান ৩, ভ্রমণ ১, ইতিহাস ৩, রাজনীতি ৪, চিকিৎসা ২, বঙ্গবন্ধু ৩, অনুবাদ ৪, অভিধান, ধম্য ১, ধর্মীয় ১ ও অন্যান্য ১৩। এখন পর্যন্ত মেলা মোট নতুন বই এসেছে ২৪৬টি।

পঞ্চম দিনের সময়সূচি
৫ ফেব্রুয়ারি বইমেলার পঞ্চম দিন। এদিন মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

আলোচনা অনুষ্ঠান
বিকাল ৪টা বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ সমরজিৎ রায় চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জাহিদ মুস্তাফা। আলোচনায় অংশ নেবেন মইনুদ্দীন খালেদ, মুস্তাফা জামান এবং আনিসুজ্জামান সোহেল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শিল্পী হাশেম খান।