তেলপাম্পে শৌচাগার বেহাল, ‘পেমেন্ট ব্যবস্থায়’ সম্ভাবনা কতটুকু

রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা কাওরান বাজারে ‘কানাডা-বাংলাদেশ সিএনজি স্টেশন’। এই স্টেশনটির শৌচাগারে ঢুকলে যে কারও বমি চলে আসতে পারে। কত দিন নয়, কত মাস যে এটি পরিষ্কার করা হয়নি; তা হয়তো পাম্প কর্তৃপক্ষও বলতে পারবে না। সম্ভবত ঢাকার সবচেয়ে ছোট সিএনজি স্টেশন এটিই। এর শৌচাগারটির বেহাল দশা।

অথচ ব্যস্ত এই নগরীতে সিএনজি ও পেট্রোল পাম্পগুলো হতে পারতো একেকটি ভরসার জায়গা। অন্তত এমনই উদ্যোগের কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সংস্থাটি সারা দেশে মডেল পেট্রোল পাম্প করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছিল। মুজিব শতবর্ষ পালন উপলক্ষে নেওয়া এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে দেশের গ্যাস ও তেল স্টেশনগুলো আধুনিক টয়লেট পেতো।

উদ্যোগের বিষয়ে বলা হয়েছিল, দেশের প্রচলিত পেট্রোল পাম্পে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো গ্রাহকসেবার ব্যবস্থা থাকে না। কিন্তু এই মডেল পেট্রোল পাম্পগুলোতে সেবার সব আয়োজন থাকার কথা ছিল। মডেল পাম্পে থাকার কথা ছিল আধুনিক ফার্মেসি, খাবারের দোকান ও শৌচাগার। যেন যাত্রীরা লম্বা ভ্রমণ করতে গিয়ে ক্লান্ত হলে বিশ্রাম নিতে পারেন। সেই আয়োজনও রাখার কথা ছিল কোনও কোনও পেট্রোল পাম্পে। সাধারণত ইউরোপ ও আমেরিকার স্টেশনগুলোতে এই ব্যবস্থা থাকে।

জ্বালানি বিভাগ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রতিটি কোম্পানিকে কমপক্ষে একটি করে মোট ৩টি মডেল ফিলিং স্টেশন স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। উদ্যোগ নেওয়ার কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও সারা দেশে এ ধরনের একটি মডেল পাম্পও উদ্বোধনের ঘোষণা দিতে পারেনি বিপিসি। যদিও সংস্থাটি বলছে, চট্টগ্রাম এলাকায় এ ধরনের তিনটি পেট্রোল পাম্পের কাজ চলছে।

কানাডা-বাংলাদেশ সিএনজি স্টেশন

কানাডা-বাংলাদেশ সিএনজি স্টেশনের কর্মী মো. আলম জানালেন, ‘তাদের ছোট স্টেশন। খুব বেশি মানুষ এখানে আসেন না। তাই একটি টয়লেটই রাখা হয়েছে।’ এ ধরনের টয়লেটে যেতে কোনও সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘না, অভ্যাস হয়ে গেছে।‘

সম্প্রতি কানাডা-বাংলাদেশ সিএনজি স্টেশনটি সরেজমিন দেখার পর রাজধানীর মগবাজারের অনুদীপ সিএনজি অ্যান্ড এলপিজি স্টেশনে গিয়ে টিপটপ একটি ওয়াশরুম দেখা গেলো। বাইরে থেকে বড় বড় ইংরেজি হরফে লেখা ‘ওয়াশরুম’। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করতেই ধারণা বদলে আগের জায়গাতেই চলে গেলো। বাইরে বেসিন থাকলেও সেখানে সাবানের দেখা মিললো না। অবশ্য পানির ব্যবস্থা ঠিকঠাক দেখা গেছে।

এখানকার একজন কর্মীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘ওয়াশরুম মাত্র দুটি। এত বেশি মানুষ আসে যে পরিষ্কার রাখা যায় না।’

এই সিএনজি স্টেশনটি অনেক বড় হলেও এখানে নারীদের জন্য আলাদা কোনও টয়লেট নেই। যদিও পাশে কর্তৃপক্ষের লোকজনের নিজেদের ব্যবহারের জন্য একটি ওয়াশরুম দেখা গেলো। যার ফটকে ছোট একটি তালা ঝোলানো।

অনুদীপ সিএনজি অ্যান্ড এলপিজি স্টেশনের ওয়াশরুম

এর বাইরে আরও বেশ কিছু ছোট বড় সিএনজি ও পেট্রোল পাম্পে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোথাও শৌচাগারের সুব্যবস্থা নেই। ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো বেশিরভাগই অপরিচ্ছন্ন। নারীদের জন্য কোথাও কোনও ব্যবস্থা রাখা হয়নি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধিকাংশ পাম্পের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শহরের ভেতরের এসব স্টেশনের ওয়াশরুমে নারীরা সাধারণত যান না। যদি একান্ত প্রয়োজনে কেউ যেতে চান, তখন কী করবেন জানতে চাইলে অনেকেই বলেন, ‘ওই সব ওয়াশরুমই ব্যবহার করতে হবে।’

‘পেমেন্ট ব্যবস্থা’ উদ্যোগের সম্ভাবনা

আগ্রহী অনেকেই মনে করেন, সারা দেশের পেট্রোল পাম্পগুলো গণশৌচাগার হিসেবে দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন, প্রয়োজনে পেমেন্টের ব্যবস্থা করেও শৌচাগার ব্যবস্থা নিশ্চিত ও পরিচ্ছন্ন রাখা যায়। যদিও পাম্প মালিকরা বলছেন, পেমেন্টের ব্যবস্থা করে উল্টো প্রতিবাদের মুখে পড়তে হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা শহরের ভেতরের স্টেশনগুলোর মূল সমস্যা জায়গার সংকট। সেখানে আলাদা করে শৌচাগারের সুব্যবস্থা করাটা কঠিন। আবার ব্যবস্থা করলে তা পরিচালনা করা কঠিন।’

ফারহান নূর বলেন, ‘ওয়াশরুমের ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতা সমস্যা আছে, পাশাপাশি এটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে আলাদা লোক রাখতে হয়। এই খরচ অনেক মালিকই করতে চান না। অনেকে পেমেন্ট সিস্টেম করে ব্যবস্থার চেষ্টা করেছিলেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রচুর অভিযোগ আসে যে কেন তারা টাকা নেবে। স্টেশনের ওয়াশরুম তারা ফ্রি ব্যবহার করতে চায়।’

তিনি আরও  বলেন, ‘বিদেশের সব জায়গায় ওয়াশরুম ব্যবহার করলেই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হয়, যা দিয়ে এটি সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখা যায়। আমাদের দেশের পরিস্থিতিতে এসব করা যাচ্ছে না বলেই স্টেশনের ওয়াশরুমের কোনও উন্নয়ন আমরা করতে পারছি না।’