ধূমপানমুক্ত রেস্তোরাঁ চান মালিকরা

হোটেল ও রেস্তোরাঁয় স্মোকিং জোন রাখার বিধান বাতিল করে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকরা।

রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে বগুড়ার সৈকত হোটেলে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহযোগিতায় ও এডভ্যান্সমেন্ট অব হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট (আহার) বাংলাদেশ আয়োজিত সেমিনারে তারা এই দাবি জানান। তারা আরও জানান, হোটেল-রেস্তোরাঁয় শিশু-মহিলা ও বৃদ্ধদের জন্য সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে খসড়া আইনটি পাশের কোনও বিকল্প নাই।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, রেস্তোরাঁয় একটি জায়গা ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলেও সেখান থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ায় পরোক্ষ ধূমপানের কবলে পড়ছেন অধূমপায়ীরা। কোনওভাবে ধূমপানের প্রভাব থেকে তাদের মুক্ত করা যাচ্ছে না।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরাফাত ইসলাম বলেন, সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠন সম্ভবপর বলে আমি মনে করি।

বিশেষ অতিথি ডা. মো. সামির হোসেন মিশু বলেন, ‘ধূমপানের কারণে ক্যানসারের ব্যাপকতা বাড়ছে। পরোক্ষ ধূমপানেও একই স্বাস্থ্য ঝুঁকি। পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে বাঁচতে রেস্তোরাঁতে স্মোকিং জোন রাখা চলবে না।’

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও আহার বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এম. রেজাউল করিম সরকার রবিন জানান, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে রেস্তোরাঁকে পাবলিক প্লেস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি ‘ধুমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’-এর বিধান রাখা হয়েছে। যা পাবলিক প্লেসকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে অন্তরায়।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া অধূমপায়ীদের নাগরিক অধিকার। পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বহাল রেখে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে অধূমপায়ীদের রক্ষা করা কখনওই সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় হসপিটালিটি সেক্টরে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।’

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের ম্যানেজার (প্রোগামস) মো. আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সদস্যরা আগের মতোই হোটেল-রেস্তোরাঁতে স্মোকিং জোন রাখার বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করবেন।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী জনাব মো. শরিফুল ইসলাম। প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ। যার মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ শুধুমাত্র রেস্তোরাঁয় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়।’

সংশোধিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি দ্রুত পাশ করে রেস্তোরাঁসহ সকল পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।

বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও আহার, বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এম. রেজাউল করিম সরকার রবিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলার কমিটির নেতৃবৃন্দ।