আজ বৃহস্পতিবার (১ মে) মহান মে দিবস, বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। সারা বিশ্বে দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে গণ্য হয়। বাংলাদেশেও এই দিনে সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীরা ছুটি ভোগ করে থাকেন। মে দিবসে শ্রমিকদের ছুটি আইনস্বীকৃত অধিকার হলেও হোটেল-রেস্টুরেন্ট সেক্টরের শ্রমিকদের ছুটি দিতে নানা টালবাহানা করেন মালিকরা। তবে এবার এক ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে ঢাকা মহানগরীতে। মে দিবস উপলক্ষে আজ রাজধানীর প্রায় সব হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ দেখা গেছে।
সরেজমিন ঢাকা দক্ষিণ মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নামিদামি হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের ঝুঁপড়ি হোটেলও বন্ধ। হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মে দিবস উপলক্ষে আজ সব কর্মচারীকে ছুটি দিয়েছেন, তাই হোটেল বন্ধ।
এদিকে মে দিবসের ছুটি পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্মীরা। এই দিনটিকে তারা নানাভাবে উদযাপন করছেন। কেউ দলবেঁধে সড়কের পাশে ক্রিকেট খেলছেন, কেউ ফুটবল খেলছেন, আবার কেউবা পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে বের হয়েছেন। অনেকে আবার গ্রামের বাড়িতেও গেছেন।
মে দিবসে ছুটি পেয়ে খুশি হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্মীরা
পুরান ঢাকার জনসন রোডে অবস্থিত স্টার হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট এবং মতিঝিল ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। প্রতিদিন এখানকার কর্মীরা কর্মব্যস্ত থাকলেও আজ মে দিবস উপলক্ষে ছুটি পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত।
মতিঝিল ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের এক কর্মচারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এই হোটেলে শতাধিক স্টাফ আছে। আজ সবার ছুটি। শ্রমিক দিবস উপলক্ষে এই ছুটি দেওয়া হয়েছে। আমরা কেউ এই ছুটি খেলাধুলা করে কাটাচ্ছি, আবার কেউ ঘোরাফেরা করে কাটাচ্ছে।’
পুরান ঢাকার কলতাবাজার এলাকার রাজমহল রেস্তোরাঁর কর্মচারী মো. রাসেল বলেন, ‘আমি এই হোটেলে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে কাজ করি। আগে কখনও এই দিনে ছুটি না পেলেও গত দুই বছর ধরে শ্রমিক দিবসের ছুটি পাচ্ছি। সারা বছরে আমাদের মতো একজন শ্রমিকের জন্য একটা বিশেষ দিন আছে, এটা ভেবেই আনন্দ লাগছে।’
জোর করে খাবার হোটেল বন্ধ করার অভিযোগও রয়েছে
মে দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বড় বড় হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকলেও অলিগলিতে কিছু ছোট খাবার হোটেল খোলা থাকতে দেখা যায়। যেখানে দোকানি নিজেই খাবার বিক্রি করছেন। তবে ‘বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের’ টিশার্ট গায়ে দিয়ে আসা কয়েকজন সেই হোটেলগুলো জোর করে বন্ধ করে দেন। মালিকরা হোটেল বন্ধ করতে না চাইলে তাদের মারধরের হুমকি দিয়ে হোটেল বন্ধ করানোর অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দুপুর আড়াইটার দিকে পুরান ঢাকার জনসন রোডে দেখা যায়, অলি বিরিয়ানি হাউজ নামে একটি বিরিয়ানির দোকানে বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের টিশার্ট গায়ে দিয়ে আসা ৮-১০ জন যুবক জোর করে দোকানের সাটার বন্ধ করে দেন। একইসঙ্গে আজ যেন কোনও খাবার বিক্রি করা না হয়, সে জন্য কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অলি বিরিয়ানি হাউজের মালিক শাহেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি তো একা দোকান করি। আজ যেই দিবসই হোক, আমি দোকান না করলে তো আমার সংসার চলবে না। আমার দোকানে কোনও শ্রমিক নাই। আমি নিজেই শ্রমিক, নিজেই মালিক। কেউ আমাকে আজ দোকান বন্ধ রাখার জন্য কোনও ভাতা দেবে না। তাহলে আমি কেন অযথা দোকান বন্ধ রাখবো।’
এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘বিক্রির জন্য আমি আর আমার স্ত্রী রাতে রান্না করি। প্রতি দিনই আমরা নিজেরা রান্না করি। সেটা দোকানে এনে বিক্রি করি। আজ এই খাবার যদি না বিক্রি করতে পারি তাহলে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আমার এই ক্ষতিপূরণ দেবে কে! আমার দোকান আমি খোলা রাখবো, কেউ আমাকে জোর করে দোকান বন্ধ করার নির্দেশনা দিতে পারে না।’
এদিকে অলি বিরিয়ানি হাউসে খেতে আসা রায়হান উদ্দিন নামে একজন পথচারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শ্রমিক দিবস উপলক্ষে হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্মীদের ছুটি দেওয়া নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। কিন্তু যারা একাই হোটেল চালায় তাদের জোর করে দোকান বন্ধ করানো উচিত না।
এই পথচারী আরও বলেন, চাকরির সুবাদে আমাকে নিয়মিত বাইরে খেতে হয়। সব হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় অনেক খোঁজাখুঁজির পরও আমি খাবার দোকান পাইনি। এখন এখানে খেতে আসলাম, তাও কয়েকজন এসে জোর করে দোকান বন্ধ করে দিলো।
ছবি: প্রতিবেদক