সাক্ষাৎকারে তরুণ লেখক সোহেল মাহমুদ

নতুন লেখকদের উৎসাহ না দিলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে

নতুন লেখকদের বই কিনে উৎসাহিত না করলে তারা লেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন বলে মনে করেন তরুণ লেখক সোহেল মাহমুদ। ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩’-এর পঞ্চম দিন রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মেলায় বাংলা ট্রিবিউনের মুখোমুখি হন তিনি। এ সময় মেলা উপলক্ষে তার প্রকাশিত বই, মেলার সার্বিক পরিস্থিতি এবং তরুণ লেখকদের অনুপ্রাণিত করার বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

বাংলা ট্রিবিউন: এবারের বইমেলায় আপনার কয়টি বই এসেছে?

সোহেল মাহমুদ: এবারের অমর একুশে বইমেলায় আমার নতুন একটি বই এসেছে ‘অ-নির্বাণ’। এটা আমার প্রথম থ্রিলার উপন্যাস। এটি ‘অনার্য পাব্লিকেশন’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বইটি মেলার ৯২-৯৫ নম্বর স্টলে পাওয়া যাবে। এর প্রচ্ছদ করেছেন রাহাত অনার্য। প্রচ্ছদের ছবিটি লুভোমির ইভানচিক থেকে নেওয়া। বইটির মূল্য ৫০০ টাকা।

বাংলা ট্রিবিউন: বই সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলুন।

সোহেল মাহমুদ: এটা আসলে একটা থ্রিলার উপন্যাস। নির্বাণ বলতে আমরা যেটা বুঝি তা হলো, এটা লোভ-লালসা, যেকোনও ধরনের হিউমান ফিলিংসের ঊর্ধ্বের বিষয়। অ-নির্বাণ বলতে আমি বুঝিয়েছি, মানুষ লোভ-লালসা যেকোনও ধরনের হিউমান ফিলিংসের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। মানুষ মাত্রই কিন্তু চাই। সে কোনও নিয়ম-কানুনের মধ্যে থাকতে চায় না। মুক্ত হতে চায়। কিন্তু আসলেই কী সে সেটা পারে? কখনোই পারে না। থ্রিলারের একটা ক্রাইমের মধ্য দিয়ে একটা মানুষের মুক্তি পাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা সেটাকেই বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি।

বাংলা ট্রিবিউন: এবারের মেলায় এসে কেমন লাগছে?

সোহেল মাহমুদ: গতবারের চেয়ে বেশি ভালো লাগছে। এবারের মেলায় গতবারের চেয়ে অনেক বেশি ভিড়। লোকসমাগম বেশ বেড়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: বইমেলা নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?

সোহেল মাহমুদ: আমি আশা করি, যারা মেলার সঙ্গে সংযুক্ত আছেন, বিশেষ করে প্রিন্ট মিডিয়া, টিভি চ্যানেল আছে। তারা যেন তরুণ লেখকদের আরও বেশি উৎসাহিত করে। কারণ এই তরুণ লেখকরাই হয়তো ভবিষ্যতে অনেক বড় লেখক, বড় নাট্যকার, বড় স্ক্রিপ রাইটার হবেন। আমরা যদি নতুন লেখকদের পরিচর্যা করি তাহলে এটা আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের দেশ, সবকিছুর জন্য ভালো হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: গত বছর আপনার কোন বইটি প্রকাশিত হয়েছে?

সোহেল মাহমুদ: গত বছর আমার লেখা ছোটগল্পগুলো থেকে বাছাইকৃত সাতটি গল্প নিয়ে ‘ঘুণ পোকাদের গল্প’ প্রকাশিত হয়েছে। এটা একটা সমকালীন বই ছিল। এই বইটি পাঠক সমাজে স্থান করে নিয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: এবারের বইমেলায় এখন পর্যন্ত আপনার কী কী অসঙ্গতি চোখে পড়েছে?

সোহেল মাহমুদ: অসঙ্গতি বলতে আমার যেটা মনে হচ্ছে, মেলায় যেই স্টলগুলো আছে সেই স্টলগুলোর সিরিয়াল মেনটেইন করা উচিত ছিল। তাহলে দর্শনার্থী বা পাঠকদের জন্য সুবিধা হতো। এছাড়া যদি গলির মুখে প্লে-কার্ড দিয়ে লিখে দেওয়া হতো এই গোলিতে কত থেকে কত নাম্বার স্টলটা আছে তাহলে যারা বই কিনতে আসতো তাদের জন্য সুবিধা হতো। আর শৌচাগারের সমস্যা তো দীর্ঘ দিনের। এখানে শৌচাগার খুবই অপ্রতুল। আদৌ এর কোনও সমাধান হবে কিনা আমি জানি না। কর্তৃপক্ষের উচিত এই সমস্যার সমাধান করা।

বাংলা ট্রিবিউন: কাগজের মূল্যবৃদ্ধি লেখক, প্রকাশক বা পাঠক সমাজে কতোটুকু প্রভাব ফেলেছে?

সোহেল মাহমুদ: কাগজের মূল্যবৃদ্ধি আসলে খুবই খারাপভাবে প্রভাব ফেলেছে। কারণ আমি নিজেই যদি বাস্তবতা থেকে বলি তাহলে আমার এই বইয়ের মূল্য গতবারের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি হয়ে গিয়েছে। এর কারণ কাগজের মূল্যবৃদ্ধি। গতবছর কাগজের যা দাম ছিল এ বছর তা দ্বিগুণ হয়েছে। প্রকাশক আসলে অপারগ। গতবার যে টাকায় পাঁচশ’ বই ছাপা হয়েছে এবার এটা তিনশ’তে নেমে এসেছে। এ ক্ষেত্রে পাঠকদের সহযোগিতা আমাদের কাম্য।

বাংলা ট্রিবিউন: পাঠকদের উদ্দেশ্যে আপনার কী আহ্বান?

সোহেল মাহমুদ: পাঠকদের উদ্দেশ্যে আমি বলবো, আপনারা মেলায় আসুন, বই দেখুন, বই কিনুন এবং তরুণ লেখকদের উৎসাহিত করুন। কারণ এই লেখকরাই কিন্তু ভবিষ্যতের হুমায়ূন আহমেদ হবেন বা জাফর ইকবাল স্যার হবেন। আপনারা তরুণ লেখকদের বই পড়ুন, সমালোচনা করুন। তাহলে তারা ভবিষ্যতে আরও ভালো লিখবেন। নয়তো তারা লেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। একটা লেখক বেঁচে থাকে তার পাঠকের ওপর।