যে দিনগুলোতে বইমেলায় আসতে পছন্দ করেন তারা

অমর একুশে বইমেলা মানে সাহিত্যপ্রেমীদের মিলন মেলা। মেলা মানে লোকসমাগম। আর মেলায় ভিড় দেখতেই পছন্দ করেন লেখক-প্রকাশক বিক্রয়কর্মীরা। কারণ যত ভিড়, বইয়ের বিক্রিও তত বাড়বে। আর তাই তো ছুটির দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন তারা। অধিকাংশ পাঠক ছুটির দিনটিকেই বেছে নেন মেলায় আসার উপযুক্ত সময় হিসেবে। তবে এক শ্রেণীর পাঠক আছেন যারা মেলার ফাঁকা দিনগুলোতেই মেলায় আসতে পছন্দ করেন। তাদের উদ্দেশ্য মেলায় নিরিবিলি পরিবেশে মেলা ঘুরে দেখা ও বই কেনা।

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার ষষ্ঠদিন মেলায় কথা হয় এমনই কয়েকজন পাঠকের সঙ্গে। তারা জানান, প্রকৃতিগত কিছু মানুষ আছেন যারা ভিড় এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন, লোকসমাগমে খুব একটা যেতে চান না। তারাই মূলত ফাঁকা দিনগুলোতে মেলায় আসতে পছন্দ করেন। এছাড়াও ফাঁকা দিনগুলোতে মেলায় আসার কিছু সুবিধা রয়েছে বলেও তারা জানান। ভিড় কম হওয়ায় সহজে চলা-ফেরা করা যায়, কোনও ঝামেলা ছাড়া পুরো মেলা ঘুরে দেখা যায়। পছন্দের বইগুলো কম সময়ে কেনে ফেলা যায়।IMG_20230206_183202

রাজধানীর বাড্ডা থেকে বইমেলায় আসা পাঠক সাজেদা নাজনীন বলেন, আমি ভিড় এড়িয়ে চলতে পছন্দ করি। সেজন্য ফাঁকা দিনগুলোকে বেছে নেই মেলায় আসতে। শুধু আমি না এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ভিড় পছন্দ করেন না। তারাই দেখবেন মূলত বইমেলার ফাঁকা দিনগুলোতে আসেন। এতে ভিড় এড়িয়ে সহজে মেলা ঘুরে দেখা যায় নিজের মতো করে। কম সময়ে কেনাকাটাও করা যায়।

মোহাম্মদপুর থেকে আগত বেসরকারি চাকরিজীবী হামিদ হাসান বলেন, আমি ফাঁকা দিনগুলোতেই মেলায় আসতে পছন্দ করি। মেলায় ফাঁকা দিনগুলোতে আসার সুবিধা রয়েছে। যেমন—ভিড় কম হওয়ায় সহজে চলা-ফেরা করা যায়, কোনও ঝামেলা ছাড়া পুরো মেলা ঘুরে দেখা যায়।IMG_20230206_182902

ফাঁকা দিনগুলোতে দর্শনার্থীর তুলনায় ক্রেতা বেশি থাকেন বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা। গ্রন্থকুটির প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী অমিত হাসান বলেন, ছুটির দিনগুলোতে বিক্রি বেশি। তবে এসকল দিনে দর্শনার্থী বেশি থাকে। ফাঁকা দিনগুলোতে পাঠক তুলনামূলক বেশি দর্শনার্থীদের তুলনায়।

মেলার নিয়মিত আয়োজন:

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় কাজী রোজী এবং দিলারা হাশেম স্মরণে আলোচনা অনুষ্ঠান। এসময় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাসির আহমেদ এবং তপন রায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আসলাম সানী, শাহেদ কায়েস, আনিসুর রহমান এবং শাহনাজ মুন্নী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অসীম সাহা।

প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, কবি, গীতিকার, নাট্যকার, গল্পকার কাজী রোজী আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের এক প্রগতিশীল সাহসী নারী, সদা প্রাণোচ্ছল এক লড়াকু জীবনযোদ্ধা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সকল প্রগতিশীল আন্দোলন সংগ্রামে সামনের সারির কর্মী ছিলেন তিনি। অপরদিকে, বাংলাদেশের খ্যাতিমান ঔপন্যাসিকদের মধ্যে দিলারা হাশেম একটি বিশিষ্ট নাম। ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, কবি, অনুবাদক, সংবাদ পরিবেশক, সংগীতশিল্পী ইত্যাদি নানা অভিধায় তাঁকে অভিহিত করা যায়। তিনি মূলত নগরজীবন ও বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজে সুখ-দুঃখ, স্বপ্ন-সাধ, ভালোবাসা, হতাশ ও জীবনের বাস্তবতা সাহিত্যে তুলে এনেছেন।

আলোচকবৃন্দ বলেন, কবি কাজী রোজী বাংলা সাহিত্যজগতে যেমন তার প্রতিভার নজির রেখেছেন, তেমনি বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। শুধু সাহিত্যই নয়, কাজী রোজী আমাদের সামনে সাহসী জীবনের আদর্শও রেখে গেছেন। অন্যদিকে, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বাংলা সাহিত্য জগতে অক্ষয় এক নাম দিলারা হাশেম। তার সাহিত্যের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, নারীর দৃষ্টি দিয়ে তিনি ব্যক্তি ও সমাজকে দেখেছেন। নারীর সামাজিক অবস্থান ও পরিবেশ, লড়াই সংগ্রাম লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, অবমাননা প্রভৃতি তার লেখায় মূর্ত হয়ে উঠেছে।

সভাপতির বক্তব্যে অসীম সাহা বলেন, জীবনের নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে কাজী রোজী যে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়েছেন, তাতে তিনি সফল হয়েছেন। জীবনের অন্তর্গত রহস্য ও নিম্নশ্রেণির মানুষের সংগ্রাম দিলারা হাশেমের সাহিত্যকর্মে ওঠে এসেছে। আমাদের উচিত যথাসময়ে তাদের মতো গুণী মানুষের কাজের স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদর্শন।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মোজাম্মেল হক নিয়োগী, রহীম শাহ, সত্যজিৎ রায় মজুমদার ও তুষার কবির।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাহবুব সাদিক, ফারুক মাহমুদ এবং আতাহার খান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, মাহিদুল ইসলাম এবং অনন্যা লাবনী।

নতুন বই

অমর একুশে বইমেলার ষষ্ঠ দিন নতুন বই এসেছে ১২১টি। এরমধ্যে গল্পের ১৬টি, উপন্যাস ২৪টি, প্রবন্ধের ৫টি, কবিতার ৩২টি, গবেষণামূলক ১টি, ছড়ার ২টি, শিশুসাহিত্যের ৩টি, জীবনী ৮টি, রচনাবলি ২টি, মুক্তিযুদ্ধের ৩টি, নাটকের ১টি, ভ্রমণ বিষয়ক ২টি, ইতিহাসের ৫টি, ধর্মীয় ৩টি, অনুবাদ ১টি ও অন্যান্য ১৩টি।

সপ্তমদিনের সময়সূচি

৭ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) অমর একুশে বইমেলার সপ্তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে মাহবুব তালুকদার এবং আলী ইমাম স্মরণে আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন গাজী রহমান ও আহমাদ মাযহার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন লুৎফর রহমান রিটন, ড. নিমাই মণ্ডল, আমীরুল ইসলাম এবং ওমর কায়সার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ফরিদুর রেজা সাগর।