অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশকরা নানা বিষয়ের বই নিয়ে পাঠকের সামনে হাজির হন। বইয়ের এই উৎসব পাঠক যেমন উপভোগ করেন, প্রকাশকরাও খুঁজে পান বিক্রির আনন্দ। উৎসবের আমেজ বাড়াতে এবার বিশেষ সাজে সাজানো হয়েছে বেশ কিছু স্টল-প্যাভিলিয়ন। মেলায় বিশেষ সাজের প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলোতে পাঠক-দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। এগুলোর কোনোটাতে গ্রামীণ সাজের ছোঁয়া, আবার কোনোটা পুরাতন অট্টালিকা বা বইয়ের আদলে তৈরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন গেট দিয়ে মেলায় ঢুকতেই চোখে পড়ে আকাশ প্রকাশনীর গ্রামীণ সাজের প্যাভিলিয়ন। বাঁশ আর ছন দিয়ে নির্মাণ করা প্যাভিলিয়নটি ইতোমধ্যে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কেড়েছে। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) মেলার সপ্তম দিনে দেখা যায় প্যাভিলিয়নটিকে ঘিরে পাঠক-দর্শনার্থীদের ভিড়। সেখানে কেউ বই দেখছেন, কেউ ছবি তুলছেন।
উৎসবের আমেজ বাড়াতেই এমন উদ্যোগ জানিয়ে আকাশ প্রকাশনীর স্টল ইনচার্জ ইব্রাহিম বলেন, আসলে মেলা মানে উৎসব। দর্শনার্থী-পাঠকের মাঝে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দিতে এই ভিন্ন সাজের প্রয়াস। স্টল দেখে পাঠক-দর্শনার্থীরা আসছেন, বই দেখছেন, কিনছেন, ভালো লাগছে।
অন্যপ্রকাশের বিক্রয়কর্মী রাহাত বিন কাদের বলেন, পাঠক-দর্শনার্থীদের টানতে প্রকাশকরা ভিন্ন সাজে স্টল-প্যাভিলিয়ন সাজিয়েছেন। তাতে ফলও ভালো পাচ্ছেন তারা। ব্যতিক্রমী সাজে তৈরি স্টল-প্যাভিলিয়নেই পাঠক-দর্শনার্থী বেশি যাচ্ছেন।
মেলায় স্টল-প্যাভিলিয়নের বৈচিত্র্য ও নান্দনিক উপস্থাপনা মেলার সৌন্দর্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করেন অনেক পাঠক। মেলায় ঘুরতে আসা আসাদ হামিদ বলেন, বইমেলার মূল সৌন্দর্য হচ্ছে মানসম্মত বই প্রকাশ ও প্রদর্শনী, লেখক-পাঠকের সৌহার্দ্য বিনিময়। তবে মেলার স্টল-প্যাভিলিয়নের বৈচিত্র্যময়তা মেলার সৌন্দর্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে মাহবুব তালুকদার ও আলী ইমাম স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গাজী রহমান, আহমাদ মাযহার লিখিত প্রবন্ধ তার অনুপস্থিতিতে পাঠ করেন মোকারম হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. নিমাই মণ্ডল, আমীরুল ইসলাম ও ওমর কায়সার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফরিদুর রেজা সাগর।
প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, মাহবুব তালুকদার বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের অন্যতম প্রধান রূপকার। অপরদিকে, পাঠ্যপুস্তকের নানা অনুশাসনের বাইরে শিশু-কিশোরদের অনাবিল আনন্দ দান ও তাদের জ্ঞানতৃষ্ণা মেটানোর দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে গেছেন আলী ইমাম।
সভাপতির বক্তব্যে ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, আলী ইমাম ও মাহবুব তালুকদার বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল দুটি নাম। তারা তাদের চিন্তাচেতনা ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
মেলায় লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন আবুল কাসেম, সাকিরা পারভীন, জালাল ফিরোজ ও পলাশ মাহবুব।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন জাহিদুল হক, গোলাম কিবরিয়া পিনু এবং ইউসুফ রেজা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন কাজী মাহতাব সুমন, নায়লা তারাম চৌধুরী এবং সংগীতা চৌধুরী। সংগীত পরিবেশন করেন তপন মজুমদার, মনোতোষ চক্রবর্তী, শামসেল হক চিশতি, এএইচএম সালাউদ্দিন, অনিমা মুক্তি গোমেজ, মো. মোখলেসুর রহমান এবং মো. মুরাদ হোসেন।
মেলায় নতুন বই
সপ্তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১০৪টি। এরমধ্যে গল্পের ১৩টি, উপন্যাস ১৬টি, প্রবন্ধের ২টি, কবিতার ৩১টি, গবেষণা বিষয়ক ২টি, ছড়া ১টি, শিশুসাহিত্যের ২টি, জীবনী ৫টি, রচনাবলি ২টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৩টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ৩টি, ভ্রমণের ১টি, ইতিহাসের ১টি, রাজনীতির ১টি, চিকিৎসা বিষয়ক ১টি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ১টি, রম্য ১টি, ধর্মীয় ১টি, অনুবাদ ২টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি ও অন্যান্য ১৩টি।
অষ্টম দিনের সময়সূচি
আগামীকাল বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মেলার মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জন্মশতবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলি: আলী আকবর খান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাইম রানা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন কমল খালিদ এবং আলী এফ.এম. রেজওয়ান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শেখ সাদী খান।