মেলায় পাঠক এখনও হুমায়ুন আহমেদের বই আগে খোঁজেন

বইমেলায় এখনও পাঠকের প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মেলায় প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা জানান, বইমেলায় পাঠক এসেই সবার আগে হুমায়ুন আহমেদের বই খোঁজেন। প্রকাশকরা মনে করেন, হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের চাহিদা অন্য কোনও লেখক পূরণ করতে পারবেন না। হয়তো কিছু নতুন লেখক তৈরি হয়েছে, হচ্ছে—যারা হুমায়ূন আহমদের মতো লেখার চেষ্টা করেন। তারা হয়তো কিছু অভাব ঘোঁচাতে চেষ্টা করছেন কিন্তু পুরোপুরি কখনও সম্ভব হবে না।

অন্যপ্রকাশের স্টল ইনচার্জ তৌহিদুল ইসলামের কাছে এবার মেলায় পাঠকের আগ্রহের শীর্ষে থাকা লেখকের নাম জানতে চাইলে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটু জোর গলায় উত্তর দেন 'হুমায়ুন আহমদ'। তিনি বলেন, পাঠক এসেই আগে জানতে চান হুমায়ুন আহমেদের কী কী বই আছে। এখন পর্যন্ত বিক্রিও বেশি তার বইয়ের। হুমায়ুন আহমেদের যে অভাব তা কখনও পূরণ হবার নয়। এখনও অনেকেই এসে হুমায়ুন আহমেদের নতুন বই খোঁজেন, তারা হয়তো জানেনও না তিনি বেঁচে নেই।IMG_20230208_180236

অনন্যা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আরাফাত হোসেন বলেন, মেলার শুরু থেকেই হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের বিক্রি বেশি, পাঠকও বেশি। সময়ের সাথে সাথে হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের চাহিদাও বাড়ছে। এর পাশাপাশি জাফর ইকবাল, হুমায়ুন আজাদসহ কিছু লেখকের বইও মোটামুটি ভালো চলছে। তবে হুমায়ুন আহমেদ অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

কাকলী প্রকাশনীর বিক্রিয়কর্মী তানবীর আহমেদ বলেন, হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের চাহিদা সব সময়ই বেশি। তার বিশেষ কিছু বইয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ বেশি রয়েছে, সেগুলোই বেশি বিক্রি হচ্ছে।IMG_20230208_175657

সাবলীল ও সহজ ভাষায় গল্প বলার কারণে হুমায়ুন আহমেদের পাঠক বেশি। তার ভাষা পাঠককে বুঝতে বেগ পেতে হয় না। তিনি পাঠককে ছুঁতে পারেন বলেই এতো জনপ্রিয়তা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাজিয়া অমি বলছিলেন কথাগুলো। তিনি আরও বলেন, হুমায়ুন আহমেদ সব সময়ই পাঠকের কাছে নন্দিত থাকবেন তার সৃষ্টির মাধ্যমে।

নতুন বই

বুধবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১১৪টি। এর মধ্যে গল্প ১৩, উপন্যাস ১৩, প্রবন্ধ ৬, কবিতা ৪৪, গবেষণা ১, ছড়া ২, জীবনী ৭, মুক্তিযুদ্ধ ৩, নাটক ২, বিজ্ঞান ১, ভ্রমণ ১, ইতিহাস ৬, চিকিৎসা ১, ধর্মীয় ৪, অনুবাদ ১, সায়েন্স ফিকশন ১ ও অন্যান্য ৭টি।

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আলি আকবর খান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইম রানা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কমল খালিদ এবং আলী এফ. এম. রেজওয়ান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শেখ সাদী খান।

প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে করেন সাইম রানা বলেন, বাঙালি সংগীতকার ওস্তাদ আলি আকবর খান তার অনন্যসাধারণ বাদনশৈলী ও সুজানকীর্তি এবং শিল্প-অবদানের জন্য বিশ্ববিখ্যাত হয়েছিলেন। তার সৃজনশীল কর্মের মধ্যে চলচ্চিত্রে সুরারোপ ও নতুন রাগ রচনা  গুরুত্বপূর্ণ।

আলোচকবৃন্দ বলেন, শাস্ত্রসংগীতে আলাপই হচ্ছে রাগের প্রাণ। আলাপের ভেতরেই আলঙ্করিক প্রয়োগ থাকে। ওস্তাদ আলি আকবর খান বাদনশৈলীতে আলাপের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বিশেষ সাংগীতিক বোধসম্পন্ন শিল্পী ছিলেন। লোকসংগীতের নানা অনুষঙ্গকে তিনি যেভাবে শাস্ত্রীরা সংগীতের সঙ্গে সমন্বয় করে উপস্থাপন করেছেন, তা সারাবিশ্বে নন্দিত হয়েছে। তবে তিনি কেবল একজন সাধক ও শিল্পীই নন, এই শাস্ত্রটিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিদ্যায়তনিক ও সাংগঠনিক নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন, প্রতিষ্ঠা করেছেন সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সভাপতির বক্তব্যে শেখ সাদী খান বলেন, সংগীত দিয়ে সারা বিশ্ব জয় করেছিলেন আলি আকবর খান। যন্ত্রবাদন ও সংগীত দ্বারা শিল্পী যখন মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলেন, তখন সংগীত হয়ে ওঠে জাদু। আলি আকবর খান ছিলেন তেমনই একজন।

আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন হাবিব আনিসুর রহমান, গাজী আজিজুর রহমান, রাসেল রায়হান, ইসমত শিল্পী।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন মাকিদ হায়দার, জাহিদ হায়দার, স্মৃতি আক্তার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন। আবৃত্তিশিল্পী মো. শাহাদাৎ হোসেন, এনামুল হক বাবু এবং চৈতালী হালদার। ফয়জুল্লাহ সাঈদের পরিচালনায় ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন 'শিল্পবৃত্ত'-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতি, আলম দেওয়ান, মমতা দাসী বাউল, মো. আবুল বাশার, ফারজানা আফরিন ইভা, পাগলা বাবলু, মো. আনোয়ার হোসেন এবং সন্ধ্যা রানী দত্ত।

নবম দিনের সময়সূচি

৯ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলি কবীর চৌধুরী এবং জন্মশতবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলি সাংবাদিক সাহিত্যিক জহুর হোসেন চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আবদুস সেলিম ও জাহীদ রেজা নূর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, খায়রুল আলম সবুজ, মনজুরুল আহসান বুলবুল এবং মুস্তাফিজ শফি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করলেন শফি আহমেদ।