প্রাণোচ্ছল ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় দিন

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক আয়োজিত ‘হোপ ফেস্ট’ ছিল প্রাণোচ্ছল। স্টেডিয়ামেই দর্শকরা উপভোগ করেছেন মিউজিক ফেস্টিভ্যাল, কনসার্টসহ নানারকম প্রদর্শনী। তবে এই প্রথম এখানে আসা দর্শকরা সাক্ষী হয়েছেন ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার। স্টেডিয়ামে প্রবেশ করলেই চোখের সামনে ভেসে উঠেছে আশা আর সম্ভাবনার এক টুকরো বাংলাদেশ। 

ব্র্যাকের ৫০ বছরের যাত্রার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে এই উৎসব, চলবে আগামীকাল শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত। ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’, ‘সম্ভাবনার শক্তি’ এবং ‘যে পৃথিবী আমরা গড়তে চাই’ এই তিনটি প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাজানো হয়েছে তিন দিনের অনুষ্ঠানমালা। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত থাকছে এই আয়োজন।

হোপ ফেস্ট (2)

‘সম্ভাবনার শক্তি’ প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে শুক্রবার উৎসবমুখর আমেজে পার হয়েছে ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় দিন। এই দিনটির সব আয়োজনের কেন্দ্রে ছিল সব বাধাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার গল্পের উপস্থাপনা, মানবশক্তির প্রতি সম্মাননা জানানো ও লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান।

এদিন হোপ ফেস্টিভ্যালে ‘আবেদ ভাই: জীবন দর্শন ও আশার জয়’ শিরোনামে একটি ইমারসিভ এক্সপেরিয়েন্সের (নিমগ্ন অভিজ্ঞতা) আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনে দর্শনার্থীরা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবনদর্শন এবং ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ার গল্প দেখতে পান চারদিকের ডিজিটাল দেয়ালে ভেসে ওঠা বিশেষ এক তথ্যচিত্রে। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এসে সাফল্যের দেখা পাওয়া ৫০ জন মানুষের ছবি দেখতে দেখতে শেষ হয় এই অভিজ্ঞতা। আয়োজকরা বলছেন, ‘ইমারসিভ এক্সপেরিয়েন্স’ ব্যবহার করে তথ্যচিত্র দেখার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে এবারই প্রথম আয়োজন করা হয়েছে।

হোপ ফেস্ট (5)

এছাড়া বিভিন্ন কর্মশালা, প্রদর্শনী, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কনসার্টের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় হোপ ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় দিনটি। এ দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল হস্ত ও কুটির শিল্প কারিগরদের সফলতার গল্প নিয়ে ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেস-এর পরিবেশনা। ব্র্যাকের ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আজ যারা সফল উদ্যোক্তা তাদের দিনবদলের গল্প উঠে আসে এ সময়।

বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ‘ইশারা ভাষায়’ (সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ) আহসান হাবিব ও তার দলের একটি মনোজ্ঞ পরিবেশনা উপভোগ করেন দর্শকরা। যাত্রিক-এর পরিচালনায় ‘অলওয়েজ আ ওয়ে: ফিফটি স্টোরিজ অফ কারেজ অ্যান্ড হোপ’ শীর্ষক নৃত্যনাট্য পরিবেশন করা হয়। যেখানে তুলে ধরা হয় হার না মানা মানুষের গল্প। আয়োজনের মধ্যে আরও ছিল, লিঙ্গসমতা নিয়ে ‘সমতন্ত্র’ শীর্ষক নবনীতা চৌধুরীর বিশেষ পরিবেশনা। রেনেসাঁ, ফিডব্যাক, ইমন চৌধুরী ও তাঁর দল, মিফতাহ জামান, ও গার্ল পাওয়ার ব্যান্ডের সংগীতের মুগ্ধতা আবিষ্ট করে উপস্থিত দর্শকদের।

হোপ ফেস্ট (9)

এছাড়া ছিল আড়ং-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত ফ্যাশন শো। এখানে সম্মাননা জানানো হয় বাংলাদেশের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের প্রতি। এরই মধ্যে দিয়ে সমাপ্তি হয় হোপ ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় দিনের।   

দ্বিতীয় দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল অংশগ্রহণমূলক নানা কর্মশালা; যেখানে শিশু, তরুণসহ সব বয়সের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। খেলার জগৎ, আরবান গার্ডেনিং, রোবোবাইটস আর রিক্সা পেইন্টিংয়ের কর্মশালাগুলোতে অংশ নেওয়ার জন্য আগে থেকেই অনলাইনে নিবন্ধন করেছিলেন আগ্রহীরা।

হোপ ফেস্ট (8)

পুরো দিনজুড়ে উৎসব প্রাঙ্গণ ছিল শিশু, কিশোর, তরুণ তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষের পদচারণায় মুখর। ব্র্যাকের বিভিন্ন প্রকল্প এবং প্রতিষ্ঠানের নানা আয়োজনে দর্শনার্থীরা অংশ নিয়েছেন। ‘আল্ট্রা পুওর গ্রাজুয়েশন’ প্রোগ্রামের আয়োজনে ‘শূন্য থেকে পূর্ণ’, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের ‘নিজ হাতে গড়ি’, ব্র্যাক সিড-এর আয়োজনে তেলাপিয়া, ভুট্টা, মৌমাছি চাষের ওপর স্টোরি টেলিং পারফরমেন্স, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভলপমেন্ট (বিআইইডি)-এর আয়োজনে শিশুদের ‘খেলার জগৎ’, সেলফ সোস্যাল এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড লিগ্যাল প্রোটেকশন-এর আয়োজনে পপুলার থিয়েটার চলবে উৎসবের প্রতিদিনই।

হোপ ফেস্ট (10)

এছাড়াও আড়ংয়ের আয়োজনে, ‘পিন অ্যান্ড উইন’ খেলায় অংশ নিয়ে অনলাইন কেনাকাটায় ২০ শতাংশ ছাড় পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন অংশগ্রহণকারীরা। আড়ংয়ের স্টলগুলোতে রিলিং প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত রেশম সুতা, তাঁত, নলি লাটাই প্রক্রিয়া, চরকার ব্যবহার মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদের।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন