সিমকার্ড বিক্রির নামে প্রতারণা করতো চক্রটি

সিমকার্ড বিক্রির নামে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও এনআইডি নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে একটি চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সিম বিক্রির নামে রাজধানীর বস্তি এলাকায় বসবাসকারীদের কাছ থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংগ্রহ করতো চক্রটি। সংগৃহীত ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে ওইসব ব্যক্তির কাছে মোবাইল সিম বিক্রি না করে, তা বিক্রি করা হতো কয়েকজন কথিত বিকাশ এজেন্টের কাছে।

পরবর্তীকালে প্রতারক চক্রের সদস্য বিকাশ এজেন্ট ও বিকাশ দোকানিদের সহায়তায় যারা বিকাশের মাধ্যমে ক্যাশ আউট এবং ক্যাশ ইন করতেন, তাদেরকে ফোন দেওয়া হতো। ফোন করে নানা কারণ দেখিয়ে বলা হতো যে, ‘আপনার নম্বরটি ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। সেজন্য আপনার ওটিপি নম্বরটি জানান।’ এরপর ওটিপি নম্বর পেয়ে  টার্গেট ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা তুলে নেওয়া হতো।

টাকা উঠিয়ে নেওয়ার পর যেসব দরিদ্র মানুষের এনআইডি এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টের বিপরীতে সিমকার্ড ইস্যু করা হয়েছিল, সেগুলো বন্ধ করে দিতো চক্রটি। এভাবেই প্রতারণা চালিয়ে আসছিল চক্রের সদস্যরা। গ্রেফতারকৃত প্রতারক চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছে মিরপুর মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তাদের।

বিকাশের নামে প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে প্রতারকচক্রের পাঁচ সদস্যকে রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ভোরে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো— খোরশেদ আলম, ফয়সাল হাসান ফাহিম, আনোয়ার পারভেজ ভূঁইয়া, মমিনুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫৪টি সিম উদ্ধার করা হয়।

মিরপুর মডেল থানা পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত খোরশেদ আলম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি বাংলালিংকের এজেন্ট। অন্যরা বিকাশের এজেন্ট এবং দোকানদার। প্রতারকচক্রের মূল হোতা মূলত খোরশেদ আলম। বাংলালিংকের মার্কেট অপারেশন ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার কারণে সে  ছিল বাংলালিংকের সিমের নিবন্ধক। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সিম বিক্রি করতো সে। এজেন্ট হওয়ার সুবাদে এবং কৌশলে বিভিন্ন বস্তি এলাকায় গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করাই ছিল তার কাজ। সংগ্রহ করা ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও জাতীয় পরিচয় পত্রের বিপরীতে সে সিম ইস্যু করতো। এসব সিম খোরশেদ আলম বিক্রি করতো বিকাশ এজেন্ট আনোয়ার ও ফয়সালের কাছে।

পুলিশ আরও জানায়, সাধারণত একটি সিম ৬০ টাকা দাম হলেও এসব সিম খোরশেদ বিক্রি করতো ২০০ টাকা করে। ২০০ টাকা দরে কেনা সিম আবার ৩০০ টাকা দরে আনোয়ার ও ফয়সালের কাছ থেকে কিনে নিতো বিকাশের দোকানদার মমিনুল। পরে এসব সিম থেকেই বিকাশ এজেন্টের কর্মকর্তা সেজে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হতো।

গত ২ ফেব্রুয়ারি মাহতাব হোসেন তার বিকাশ নম্বরে ১২ হাজার টাকা ক্যাশ ইন করেন। বাসায় ফেরার পথে তাকে ফোন করে জানানো হয়— ক্যাশ ইন করার সময় ভুল নম্বরে টাকা চলে যাওয়ায় একটি নম্বর ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। সেই লক খোলার জন্য ওটিপি মাহতাবের নম্বরে পাঠানো হয়েছে। মাহতাব সেই নম্বর বলার পর দেখেন— তার বিকাশ থেকে ৪৭ হাজার ৯৪০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। তারপর ওই নম্বরে ফোন করলে ফোন বন্ধ পান ভুক্তভোগী মাহতাব। পরবর্তী সময়ে তিনি মিরপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মহসিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত চক্রটির মূল টার্গেট ছিল নিম্নশ্রেণির লোকজন। এই প্রতারকচক্রের আরও আর কারা জড়িত বাংলালিংক এবং বিকাশের কোনও কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে কিনা— এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চক্রটি এ ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে কতজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তাও বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।অন্যান্য