অমর একুশে গ্রন্থমেলা

তরুণ পাঠকদের পছন্দের শীর্ষে থ্রিলার

অমর একুশে বইমেলার দ্বাদশ দিন রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) মেলা ঘুরে জানা যায়, থ্রিলারধর্মী বইয়ের বিক্রি উপন্যাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভালোই চলছে। আর এই থ্রিলারধর্মী বইয়ের পাঠক মূলত কিশোর-তরুণরা।

প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা জানান, বইমেলায় আগত পাঠক-দর্শনার্থীদের একটি বড় অংশ হলো কিশোর ও তরুণীরা। ক্রেতার সংখ্যাও তাদের মধ্যে বেশি। এসব কিশোর- তরুণরা কিনছেন উপন্যাস, গল্পের বই। তবে তাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে থ্রিলারধর্মী বই। বয়সের উত্তেজনা, অজানা রহস্যকে জানার আগ্রহ আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়ে আগ্রহের কারণেই তাদের থ্রিলারে আগ্রহ বেশি। তবে মধ্য বয়সী ও অপেক্ষাকৃত বয়স্করাও থ্রিলার কিনছেন বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা।

স্টুডেন্ট ওয়েজের বিক্রয়কর্মী তপন বলেন, ‘আমাদের এখানে উপন্যাস ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে উপন্যাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিক্রি হচ্ছে থ্রিলারও। আর থ্রিলারের পাঠক মূলত তরুণরা।’

এই থ্রিলার পাঠকরা আবার নিজেদের পছন্দের ভিত্তি নির্ধারণ করেন লেখক, বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। কারো কাছে আর্মির দুঃসাহসিক অভিযান, কারো কাছে বিভিন্ন গুপ্ত রহস্য উদঘাটন, আবার কারো কাছে বেশি ভালো লাগে সিরিয়াল কিলিংয়ের রহস্য উদঘাটন।

নালন্দা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী শাহাদাত সিকদার সিয়াম বলেন, ‘তরুণরা মূলত থ্রিলার বেশি পড়ে। বয়সের কারণেই থ্রিলার তাদের বেশি ভালো লাগে। যাদের কাছে আর্মি রহস্য ভালো লাগে, তারা এসে আরিফুল ইসলামের থ্রিলার খোঁজে, আবার কারো কাছে রবীন জামান খানের থ্রিলার ভালো লাগে। তারা এসে তার বই কেনে।’

সেবা প্রকাশনীর ব্যাবস্থাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘আমাদের প্রকাশনা মূলত থ্রিলারধর্মী বইয়ের। আমাদের এখানে সব বয়সের পাঠকই আসেন, বই কেনেন। তবে সবচেয়ে বেশি আসেন তরুণ পাঠকরা। তরুণদের মাঝে থ্রিলারের জনপ্রিয়তা খুব বেশি।’

মেলায় বিভিন্ন স্টলে ঘুরে সাতটি বই কিনেছেন রাজধানীর নটেরডেম কলেজের শিক্ষার্থী সাজিদ নাসিম। যার মধ্যে ছয়টি বইই থ্রিলার। নাসিম বলেন, ‘আমার কাছে বই পড়তে ভালো লাগে। তবে সেটা পাঠ্যপুস্তকের বাহিরের বই। আমি গল্পের বই দিয়ে অন্য বই পড়া শুরু করি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে থ্রিলারের দিকে ঝুঁকি। এখন এটিই আমার প্রথম পছন্দ। থ্রিলার আমি যা চাই সব আছে। যেমন-অ্যাকশন, মিস্ট্রি, থ্রিল,ডার্ক কমেডি সব।’

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় হাসান হাফিজুর রহমান এবং হাবীবুল্লাহ সিরাজী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এ সময় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মিনার মনসুর এবং কাবেদুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন শোয়াইব জিবরান, শাহাদাৎ হোসেন নিপু, রুবেল আনহার এবং ওবারোদ আকাশ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এ.এইচ.এম. লোকমান।

প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, ‘হাসান হাফিজুর রহমান সকল বিচারেই দেশের বিরল প্রতিভাবানদের একজন। সাহিত্যের প্রায় সবকটি মাধ্যমেই রয়েছে তার প্রতিভা ও শ্রমের উজ্জ্বল ছাপ। তবে তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি। একইসঙ্গে একজন কর্মীও বটে। দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি নিরলস কাজ করে গেছেন কবি ও কর্মীর দ্বৈত ভূমিকায়। অপরদিকে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বাংলাদেশের সমকালীন কবিতার এক উল্লেখযোগ্য নাম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শেষে বিভিন্ন সময়ে দেশে-বিদেশে প্রকৌশলীর কার্যনির্বাহ করলেও পরিশীলিত মেধার মননে এবং আবেগমথিত হৃদয়বৃত্তির উৎসারণে তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন কবি।’

সভাপতির বক্তব্যে এ. এইচ. এম. লোকমান বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের আকাশে উজ্জ্বল দুই নক্ষত্রের নাম হাসান হাফিজুর রহমান এবং হাবীবুল্লাহ সিরাজী। তারা তাদের জীবন, সৃষ্টিকর্ম ও আদর্শ দিয়ে আমাদের কাছে প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন এবং থাকবেন।’

লেখক বলছি

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন রকিবুল হাসান, রাহাত মিনহাজ, ফেরদৌস নাহার এবং আশিক মুস্তাফা।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন বদরুণ হায়নার, টোকন ঠাকুর, খাতুনে জান্নাত, আহসান মালেক এবং কাজী আনিসুল হক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিরিন জাহান এবং অনিমেষ কর। এছাড়াও ছিল শরণ বড়ুয়ার পরিচালনায় গীতি আলেখ্য 'প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র', কবিরুল ইসলাম রতনের পরিচালনায় ‘নৃত্যালোক’ এবং ইকবাল হাফিজের পরিচালনায় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘দনিয়া সবুজ কুড়ি কচিকাচার মেলা’র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন ফারহানা ফেরদৌসী তানিয়া, রাজিয়া সুলতানা, মো. মেজবাহ রানা, আবুল কালাম আজান, নাফিসা ইসলাম ফাইজা, সুমন চন্দ্র দাস ও সুজন হাওলাদার।

১৩তম দিনের সময়সূচি

১৩ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) অমর একুশে বইমেলার ১৩তম দিন। এদিন মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী স্মরণ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশ নেবেন মোনায়েক সরকার, হারিসুল হক এবং অপূর্ব শর্মা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আবেদ খান।