বসন্তের রঙ ছিল বইমেলায়

পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে সকাল থেকেই ছিল উৎসবের আমেজ। বসন্তের রঙে নিজেদের সাজিয়েছেন তরুণ-তরুণীরা। বিকাল ৩টায় বইমেলার গেট খোলার পর সেই রঙে ছেঁয়ে যায় বইমেলাও। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার ১৪তম দিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, বসন্তী সাজে মেলায় তরুণ-তরুণীদের ভিড়। শুধু তরুণ-তরুণী নয়, মধ্যবয়সী, বয়োবৃদ্ধদেরও দেখা যায় বসন্তের সাজে।IMG_20230214_172259

মেয়েরা সেজেছে বাসন্তী রঙের শাড়িতে, হাতে পড়েছে নানা রঙের চুড়ি আর মাথায় ফুলের মুকুট। তরুণীদের সাথে তাল মিলিয়ে ছিল ছেলেদের সাজও। বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা পরেছে তারা। শুধু পাঠক-দর্শনার্থীরাই নয় বসন্তের সাজে সেজেছে প্রকাশক, বিক্রয়কর্মীরাও।

এদিন মেলায় ছিল ছুটির দিনের মতো ভিড়। তবে মেলায় ভিড় বেশি থাকলেও ক্রেতা তেমন একটা ছিল বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা। আর দিনটিতে রোমান্টিক কবিতা ও উপন্যাসের বিক্রি ভালো ছিল বলে জানান তারা।

মেলা সংশ্লিষ্টরা বলেন, মেলায় অনেক লোকজন এসেছে আজকে, ছুটির দিনের মতো ভিড়। তবে হ্যাঁ, আজকের বিক্রি অন্যদিনগুলোর মতোই স্বাভাবিক। তবে যা বিক্রি হচ্ছে, তারমধ্যে আজকে রোমান্টিক উপন্যাস ও কবিতার বই বিক্রি বেশি।IMG_20230214_172223

মেলায় অবসর প্রকাশের বিক্রয়কর্মী সাজিয়া নাজনীন বলেন, আজকে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস। কর্মব্যস্ততার মাঝেও দিনটিকে উদযাপন করার জন্য একটু সাজ। মেলায় আজকে লোকসংখ্যা ছুটির দিনের মতো। তবে বিক্রি স্বাভাবিক দিনগুলোর মতোই। আর এখন পর্যন্ত যা বিক্রি হয়েছে, তার মধ্যে বেশিরভাগই রোমান্টিক বই। কিনছেও তরুণ-তরুণীরা।IMG_20230214_182837

মেলায় ঘুরতে আসা আসলাম তাকি বলেন, আজকে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস। সেই উপলক্ষে স্পেশাল মানুষটির সাথে ঘুরতে বেরিয়েছি। মেলায় আসা মূলত ঘোরার জন্য। দেখি, ঘুরি যদি কোনও বই ভালো লাগে কিনবো।

নতুন বই

১৪ ফেব্রুয়ারি নতুন বই এসেছে ৯৩টি। এরমধ্যে গল্প ১৪, উপন্যাস ১০, প্রবন্ধ ২, কবিতা ৪৯, বঙ্গবন্ধু ১, রাজনীতি ৩, ইতিহাস ১, জীবনী ১, অনুবাদ ৩, সায়েন্স ফিকশন ১, নাটক ১, ধর্মীয় ৪, বিজ্ঞান ৩, চিকিৎসা ১ ও অন্যান্য ৫টি।IMG_20230214_182934

আলোচনা অনুষ্ঠান

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ এবং বিদেশি সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লি এইচ হাবীব এবং শামসুদ্দিন চৌধুরী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সম্পদ বড়ুয়া, রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মো. আবু জাফর এবং মাহবুবা রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফকরুল আলম।

প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, বহুকাল ধরেই সংস্কৃতি, আরবি, ফারসি, ইংরেজি, হিস্পানিক, গ্রিক ও লাতিন বহু সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ আমাদের পাঠের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে আসছে। বাংলা ভাষায় অনুবাদ এবং বাংলা নানান রচনা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের ক্ষেত্রে ইংরেজি একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। অথচ এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে সাহিত্য অনুবাদকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। যদিও বিদেশি সাহিত্যের অনুবাদ বিপুল পাঠকের চাহিদাকে পূরণ করে চলেছে। আড়ালে থেকেই অনুবাদ সাহিত্য জাতীয় সাহিত্যের পুষ্টিলাভে অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে।

আলোচকবৃন্দ বলেন, আমাদের দেশে বিদেশি সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ যত হয়েছে সে তুলনায় বাংলা সাহিত্যের বিদেশি ভাষার অনুবাদ কম হয়েছে। তথাপি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লেখা হলে সেখানে অনুবাদ সাহিত্যও বিশেষ স্থান পাবার দাবি রাখে। দেশি অনুবাদকের পাশাপাশি বিদেশি অনুবাদকদেরও বাংলা ভাষার সাহিত্য বিদেশি ভাষায় অনুবাদের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।IMG_20230214_183305

সভাপতির বক্তব্যে ফকরুল আলম বলেন, বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অনুবাদের কোনও বিকল্প নেই। এজন্য দক্ষ অনুবাদক তৈরি করার জন্য আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি অনূদিত গ্রন্থ বিদেশি পাঠকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক বলছি

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আজ আলোচনা করেন হাসান মাহমুদ, আকতার হোসেন, মিনার মনসুর এবং আইরীন নিয়াজী মান্না।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন বন্না রহমান, হাসান হাফিজ, হাসনাত লোকমান, মোশাররফ শরীর, মাসুদ পথিক এবং শারমীন জাহান মিতু। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আওরঙ্গজেব আরু, শিমুল পারভীন এবং পারভেজ চৌধুরী। এছাড়া ছিল সৈয়দ শরিফুল আলম শফুর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'মাতৃভূমি’র পরিবেশনা।

১৫তম দিনের সময়সূচি

১৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শহীদ ইকবাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন হাফিজ রশিদ খান, অনিকেত শামীম এবং সরকার আশরাফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সাজ্জাদ আরেফিন।